ছবি তথ্যসূত্র - Palash Roy
সকাল থেকেই আকাশ-টা মেঘলা। এই মেঘলা দিন নিয়ে আমরা প্রায় অনেক গল্প-কবিতা শুনে থাকি। তবে এটা যেহেতু বছরের শেষ সময় তাই এখন মেঘলা দিন-টা কিন্তু মনখারাপের বার্তা নিয়ে আসে। মানুষ সারাবছর অপেক্ষা করে বছরের শেষের এই আনান্দময় দিনগুলোর খুশি ও আনান্দ পুরোদমে উপভোগ করার জন্য। কিন্তু ওইযে বৃষ্টি এসে সব মাটি করে দিলো।
তো এইরকম একটা দিনে মন খারাপ করে না বসে থেকে আসুন আমাদের গল্পের দুনিয়ায়। যেখানে পাবেন মজা আর আনন্দ। তাহলে দেরী কিসের..আসুন তবে।
দিনটি ছিলো ২৪/০৯/২০২০।
আমার আর আপনার কাছে এটা একটা সাধারণ বিষয় মনে হলেও সোনারুন্দি গ্রামের পলাশ বাবুর কাছে ওইদিন-টি ছিলো বিশেষ আকর্ষণের।
পলাশ বাবু। পুরো নাম পলাশ রায়। বাড়ি তার মুর্শিদাবাদ জেলার সোনারুন্দি গ্রামে। তো সেই বিশেষদিনে পলাশ বাবুর উঠোনে জন্ম হয় সদ্যোজাত ফুটফুটে এক ছাগল ছানার। পলাশ বাবু ভালোবেসে নাম দেন কদমা।
একই চারিদিকে লকডাউন..বহু মানুষের কাজ চলে গেছে। অনেকের রুজি রোজগারের পথ বন্ধ। মন খারাপের মেঘ বিষাদ প্রবণ মনকে দুঃখের ছোঁয়ায় কলঙ্কিত করে। মনের অগভীর তলে বসে থাকা ডাকপিয়ন যখন নতুন রাস্তা খুঁজে না পেয়ে পরিস্থতির কাছে হার মেনে যায়। পলাশ বাবুর অবসাদের অবসান ঘটাতে ভূমিষ্ঠ হয় কদমা।
হ্যাঁ এই ফুটফুটে বাচ্চাটি সারা উঠোন ময় চারিদিকে ছুটোছুটি করে বেড়ায়। বেজায় দুষ্টু স্বভাবের হলেও..পলাশ বাবু বলতে অজ্ঞান। পলাশ বাবুকে যেন নিজের কদমা নিজের মায়ের চেয়েও বেশী ভালোবাসে। পলাশ বাবুর তাতে কোনো অভিযোগ নেই। তার বাড়িতে আরও ৪ টে সোনা বাচ্চা আছে। একএকজনের এক একএক নাম। কদমার এক ভাই এবং এক বোন ও আছে তবে তাদের মধ্যে কদমা-ই বড়ো। এছাড়া বাকি দুইজনের মধ্যে একজন ছেলে ও অন্যজন মেয়ে। তারা অবশ্য কমলা ও কমলার ভাই-বোনের থেকে একটু বড়ো।
তবে সকলের চেয়ে কদমা বেশী দুষ্টু। সারা উঠোন ময় চারিদিকে ছুটোছুটি করে বেড়ায়।
এই ছোটো বাচ্চাগুলো বড়োই প্রাণপ্রিয় পলাশ বাবুর। বাচ্চাগুলোর যখন খিদে পায় তখন তারা পলাশ বাবুর গায়ের উপরে উঠে যায়। পলাশ বাবুর পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ায়৷ যতক্ষণ না বাচ্চাগুলোকে দুধ খাওয়াচ্ছেন পলাশ বাবু ততক্ষণ অবধি মিষ্টি সুরে.. মে..মে করতেই থাকে। তারপর যেইকিনা বাচ্চাগুলোকে দুধ খাওয়ায় পলাশ বাবু। তখন বাচ্চাগুলো যে এতটা আনান্দ হয় সেটা পলাশ বাবুর বুকের বলের অন্যতম কারণ।
বাচ্চা গুলোর সাথে পলাশ বাবু এতোটাই জড়িয়ে গেছেন যে..এখন যদি রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে কোথো ছাগল কাটার দৃশ্য দেখে, তখন পলাশ বাবুর বুকের ভেতর-টার অবস্থা যে কি হয় সেটা বলে বোঝানো যাবেনা।
তার প্রিয় বাচ্চাগুলো যখন পাড়ার অন্যান্য প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে কোনো গাছ-গাছালি খেয়ে ফেলে..সেই ব্যাপারটা দুইদিন পরে হলেও পলাশ বাবুর কানে যায়। তখন তিনি তার বাচ্চাগুলোকে খুব বকা দেয়. তাদের প্রতি সাময়িক রাগ হলেও ওদের যে মায়াবী চাওনি সেটি দেখে পলাশ বাবুর মনটা গলে যায়।
তবে তাদের মধ্যে ছোটো গোল মিষ্টি বাচ্চাটিই প্রাণপ্রিয় পলাশ বাবুর। যাকে সাধ করে তিনি কদমা নাম দিয়েছেন।
তো বন্ধুরা এই ছিলো পলাশ বাবু আর তার কদমার গল্প। এই দুইদিনের দুনিয়ায় যেখানে চারিদিকে হিংসা,ঝগড়া,হানাহানি লেগেই থাকে সেখানে পলাশ বাবুর মতোন একজন আদর্শ পিতার কথা অজানাই থেকে যায়। তাদের ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব অটুট থাকুক।
উল্লেখিত ঘটনাটির তথ্যে ও ছবি আমরা পলাশ রায়ের থেকে সংগৃহীত করেছি। আপনারা পলাশ বাবু ও তার ছানাপোনাকে আশীর্বাদ করতে ভুলবেন না যেন।