Kolkata Midnight Talk

প্রতিদিন আমাদের সাথে অসংখ্য ঘটনা ঘটে। সেই সকল ঘটনা যেগুলো আমরা কেউ শেয়ার করার মতোন কাউকে পাইনা, আমাদের ব্লগে সেই সকল অজানা গল্প, অবলা পোষ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখা ছাড়াও কিছু লেখকের ভূত ও ভালোবাসার গল্প পাবেন। আশা রাখছি আমাদের পাশে আপনাদের মতোন বন্ধুদেরকে সবসময় পাবো।

LightBlog

Breaking

শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২০

পাকু চক্রবর্তীর গল্পের দেশে। Ankita Maitra।


রাতের বেলায় পাতকুয়োর ভেতরে পড়ে গেছিলো পাকুরানী নামের এক বিড়ালসোনা।পাকুর বাবা পাতকুয়োর ভেতরে একটা দড়ি দিয়ে পেঁচানো বালতি ফেলে দিয়ে..উপর থেকে বললো..উঠে আয় পাকু..তারপর কি হলো..?


হেই বন্ধুরা আমাদের জীবনে এমন কিছু মুহুর্ত আসে যেই মুহুর্ত কে আমরা বারবার উপভোগ করতে চাই। এই যেমন ছেলেবেলা, স্কুলজীবন।
ছেলেবেলা সত্যিই আমাদের অপূর্ব ছিলো। সেই সুন্দর মুহুর্ত আমাদের স্মৃতির প্রতিটা কোণায় গাঁথা আছে। মাঝেমধ্যে আমরা একবারের জন্য হলেও মনে মনে চিন্তা করি।। ইসস ছেলেবেলাটাকে যদি আবারো ফিরে পেতাম। আমাদের Silient talks of midnight animals ফেসবুক পেজে আপনাকে জানাই স্বাগতম। যেখানে আমরা সকলের ভালোলাগা,ভালোবাসা টাকে অন্যভাবে গল্পের চাঁদরে মুড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা করি। যাতে অবলাপশুদের উপর অত্যাচার কম হয়। আমরা ভালোবাসি অবলাদের, ভালোবাসি সাহিত্যেকে। ভালোবাসি ভাষাকে। 


আজ আমি আপনাদের হাওড়ার অঙ্কিতার বাড়ির ছোটো সদস্য, পাকুরানী চক্রবর্তীর একটা ছোটো গল্প শোনাবো। পাকুর মা'য়ের কাছে আমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি..আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও ছবি দিয়ে শেয়ার করার জন্য। গল্পটি জানিনা আপনারা কতটা উপভোগ করবেন..তবে চেষ্টা করবেন একটু মন দিয়ে গল্পের ঘটনা গুলোকে অনুভব করার। তাহলে আপনি পাকুদের বাড়ির প্রতিটা মুহুর্ত উপলব্ধি করতে পারবেন। তো আসুন আমাদের গল্পের দুনিয়ায়..আমি আপনাদের স্বাগতম জানালাম..এক মা ও তার মেয়ের এক ভালোবাসা ভরা দুনিয়ায়।


পাকু অঙ্কিতার বাপের বাড়িতেই জন্ম নিয়েছিলো ২০২০ সালের সম্ভবত জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে। মার্চ মাস থেকে লকডাউন পরে যাওয়ায় তিনি বাপের বাড়িতেই আটকে গেছিলেন। তখন থেকেই গল্পের মোড় অন্যদিকে এগোতে থাকে। 

পাকু সে তার মা'কে প্রচন্ড ভালোবাসে। মায়ের লক্ষী মেয়ে যাকে বলে। সকালে খাওয়ার হিসেবে পাকু সোনা ম্যাগি,দুধ বিস্কুট ( মেরি বিস্কুট ) এবং আমুল দুধ খায়।
আমাদের পাকু সোনা কিন্তু আর পাঁচটা থেকে আলাদা। তাকে যখন মাঝেমধ্যে চিকেন খেতে দেওয়া হয় তখন সে কোনো এক অজানা ভাষার গান খুশির মেজাজে গাইতে থাকে, এই হচ্ছে গানের একটা লাইন। " amna namna na "
যখন পাকুকে রাগানোর জন্য পাকুর পাতের থেকে চিকেন-টা তুলে নেওয়া হয় তখন পাকুর করুণ মুখের দিকে তাকালে যেন মনে হয় এই বুঝি ঝগড়া লাগলো বলে।  

ছবি - পাকুর সাথে পাকুুর মা ও বাবা

তবে সেই রাগ সাময়িক। পাকুর যখন আনন্দ হয় তখন সে..মশার মতোন গুনগুন করে..আর এইপ্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ছুঁটে বেড়ায়।

খুশির মেজাজে কখনো সে অঙ্কিতার মায়ের শাড়ির আচল টেনে বেড়ায় কিংবা অঙ্কিতার বাড়ির বাকি লোকজন্দের জামা কাপড় যাই পারে টান দিয়ে খেলা করার চেষ্টা করে।

পাকুর যখন আদর খাওয়ার ইচ্ছে হয় তখন সে মাটিতে গড়াগড়ি খায়। মানে বাবুকে কোলে তুলে আদর করে।

পাকু সোনা বল নিয়ে খেলতে খুব ভালোবাসে। বিশেষ গুণ বলতে পাকু মাঝেমধ্যে মানুষের মতোন হাত দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু খারাপ লাগার বিষয় এই যে..পাকুর হাতে খাওয়ার ওঠেনা। খাওয়ার সময়ের বিশেষ কোনো নিয়মাবলী নেই। বাবা মায়ের সাথেই পাকু খেতে বসে, আলাদা কোনো খাবার সময় নেই। তবে হ্যাঁ খাওয়ার আগে হাত দিয়ে মাঝেমধ্যে যাচাই করে নেয় খাওয়ার গরম নাকি ঠান্ডা।
ছবিতে যেই চেয়ারটি দেখছেন সেটি পাকুর প্রিয় চেয়ার।

পাকু তার মায়ের শরীর খারাপ হলে কিছুটা হলেও বুঝতে পারে, সে তার মায়ের মাথার কাছে এসে ডাকে। মানে সে বলতে চাইছে কি হয়েছে তোমার?

পাকুর মা, পাকুকে তার মনের কথা যখন বলে তখন সে চুপ করে শোনে।

বাড়ির মধ্যে আরশোলা,ইঁদুর, পিঁপড়ে, টিকটিকি যাই দেখুক না কেন বাবু ওদের ধরে খেলা শুরু করে দেয়। তখন অবশ্য ওদের অনেকেই ভয়ে মারা যায়।

একটা ঘটনা শেয়ার করি তাহলে..
একবার পাকু টিকটিকি খেয়ে নিয়েছিলো। পাকুর মা তখন খুব দুশ্চিন্তা করছিলেন কারণ টিকটিকি খুবই বিষাক্ত। তখন তিনি এক ভেট কে জানায় ভেট তাদের কিছু মেডিসিন বলে। তবে সেই মেডিসিনের আর দরকার পড়েনি..কিছুক্ষণ পর পাকু বমি করে সব বের করে দিয়ে
পাশের পাঁচিলে উঠে বসলো। কিছুক্ষণ পর সে ঘাস খেয়ে আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলো। বাবু পুরো ফিট্। 

পাকুর গায়ে কালো দাগ গুলী হৃদয়ের আকারের সেটি আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন। পাকুর যাতে নজর না লাগে সেজন্য পাকুর মা পাকুকে কাজলের টিকা পড়িয়ে দেন।

ছবিতে যেই টুলটি দেখছেন এটি পাকুর অন্য একটি প্রিয় টুল।

পাকুর জীবনে একটি স্মরণীয় ঘটনা, জুলাই মাসের একদিন খুব ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিলো,পাকু খেলতে খেলতে বাড়ি থেকে দুপুরে বেড়িয়ে যায়। ঝড় বৃষ্টিতে বাড়ির দরজা জানলা বন্ধ ছিলো। পাকুর মা দুশিন্তা করলেও তিনি ভেবেছিলেন পাকু হয়তো কোনো ছাওনির তলায় আছে,ঝড়বৃষ্টি থামলে এমনি চলে আসবে। কিন্তু পাকু বাড়িতে না আসায় তার মা..এদিকওদিক খুঁজতে বেড়িয়ে যায়..পাকুর নাম ধরে ডাকতে থাকে  কিন্তু কোনো সাড়া পায়না। 

সেইদিন রাত দশটার সময় অঙ্কিতার বোন সেদিন ওই বাড়িতে যায়। তিনি কথায় কথায় বলেন যে..কোথা থেকে একটা বিড়ালের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। 

তখন একটু ধাতস্থ হয়ে অঙ্কিতা বোঝার চেষ্টা করে আওয়াজটা কোথা থেকে আসছে। এদিকে অঙ্কিতার বর বাড়িতে একটু দেরী করে ফিরেছিলো সেইদিন। তিনিও অঙ্কিতার সাথে আশেপাশে খুঁজতে থাকে। তখন তারা খুঁজতে খুঁজতে উপলব্ধি করতে পারে এই আওয়াজ তাদের বাড়ির পেছন দিকের পাতকুয়োর মধ্যে থেকে আসছে। তারা দুইজনে সেখানে গিয়ে দেখে পাকু পাতকুয়োর ভেতরে পড়ে গেছে। তারা যতোবার নাম ধরে ডাকছিলো পাকু সাড়া দিচ্ছিলো। তখন সেইরকম অবস্থায় তাদের মাথায় কিছুই আসছিলোনা। তারা তখন কি করে ওকে বাঁচাবে। তখন ওই কুয়োর ভেতরে একটা বালতিকে পুরনো দড়ি দিয়ে বেঁধে পাকুর বাবা কুয়োর ভেতরে ফেলে দেয়। এবং পাকুর নাম ধরে ডাকতে থাকে। বেশ কিছুবার প্রচেষ্টা ও ভাগ্যের জোড় থাকায়..পাকুও বালতির ভেতরে উঠে পড়ে। হ্যাঁ বন্ধুরা আপনাদের কাছে এটি গল্প মনে হতে পারে তবে তখন সেই মুহুর্তে অঙ্কিতা ও তার বরের পক্ষে কতটা যে ভয়ঙ্কর ছিলো সেটা কেবল তারাই জানে। পাকুর জায়গাই অন্য কোনো বিড়াল হলে ভয় পেতো..তবে পাকুকে তার মা বাবা যেমনভাবেই হোক সুরক্ষিত ভাবে উপরে তুলতে 
চাইছিলেন। পাকুর বুদ্ধিকেও স্যালুট দিতে হয়। সে খুবি সাহসী ও বুদ্ধিমতী। 


পাকুর মা বলে, অনেকেই বিড়ালের নখ কেটে দেন। তবে তিনি এই বিষয়ে বলেন যে..এটা মোটেও উচিৎ কাজ নয়। কারণ তাদের নিরাপত্তার জন্য ওটি বিশেষ জরুরী। 

পাকু সকলের কাছে যায়না। ও খুব মানুষ চেনে। নিজের পিছন্দের ব্যক্তির কাছেই যায়। ওর অভিমান হলে চুপ করে বসে থাকে..বেশী রাগ হলে ও বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। তখন পাকুকে অনেক আদর করতে হয়,বেশীবেশী করে ভালোবাসতে হয়।

খুববেশীদিন না..পাকু তার বয়ফ্রেন্ড কে তার মায়ের কাছে নিয়ে যায়। তবে বিড়ালটি সারা ঘরে বাথরুম করতো..এটা স্বাভাবিক, বিড়ালরা এটি করেই থাকে।

পাকুর বাবা যখন বাড়িতে আসে..একদিন পাকুর মা তার বর মানে পাকুর বাবাকে জানায় পুরো ব্যাপারটা। সবশুনে পাকুর বাবা পাকুকে একটু বকে আর কানমুলে দেয়।

সেইরাগে পাকু একদিনের জন্য বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।

আমাদের পাকু সোনা ঠাকুরের সিংহাসনে উঠে বসে থাকে মাঝেমধ্যে। একবার সে ঠাকুরের সিংহাসনে উঠে সিঁদুর মেখে লাল হয়ে যায়। পাকুর গায়ের রঙ দেখে পাকুর মা..তো ভয় পেয়ে যায়..সে ভাবে হয় পাকুর কিছু হয়েছে নাহলে শিকার করেছে..পরে তার মা ঠাকুর ঘরে গিয়ে বুঝতে পারলো পাকুর কুকীর্তির কথা।


পাকুর দুটো জায়গা খুব প্রিয়। সে ওই দুটো জায়গার ভাগ কাউকে দিতে চায়না। এক হচ্ছে তার প্রিয় টুল, অন্যটা হচ্ছে তার প্রিয় চেয়ার। যদি এই দুটোর মধ্যে কোনোটা কেউ দখল করে নেয়..ব্যস পাকুর চেঁচামেচি করে ওখান থেকে নামিয়ে দেয় তাদের।

পাকুর হাতের সামনে যেই জিনিস-টাই থাকুক না কেন..সোনার সবকিছুই চাই। যদি চেয়ার বা টুলের উপর সেই জিনিস-টা থাকে তাহলে তো কথাই নেই। 
পাকু মাঝেমধ্যে আলনা ও আলমারির মাথায় উঠে টেডি বিয়ার দের সাথে বসে থাকবে। তখন পাকুকে ডকলে সাড়া দেয়না।

পাকুর সদ্য প্রেম বিচ্ছেদ হয়েছে। হয়েছে নয় করেছে..বাবার ভয়ে। পাকুর বাবা সেই হুলো বিড়ালটিকে বকেছে আর বলেছে বাড়িতে এলে ঠ্যাং খোড়া করে দেবে।

বেচারি পাকু সোনাকে নিয়ে অঙ্কিতা ও তার মা একটা কাল্পনিক গান বানিয়েছেন।

" বাড়িতে ঢুকলেই ঠ্যাং খোড়া করে দেবো, বলেছে তোমার বাবাটা। অন্য বাড়ীতে আমি যাচ্ছি তাই। পাকুমানা আমি আর আসবো না..এখানে পাকুমানা আমি আর আসবোনা "

এই গানটি মজার উদ্দেশ্য নির্মিত্ত..কাউকে অসম্মান কিংবা ছোটো করার উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার হয়নি।

পাকুর মা ও পাকু দুইজনে দুইজনকে প্রচন্ড ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসার বন্ধন টা যেমন একজন সন্তানের সাথে তার মায়ের যে বন্ধন ঠিক সেইরকম। পাকুর মা ও পাকুর বাবা দুইজনেই পাকুর প্রচন্ড খেয়াল রাখে। পাকু বিড়াল হয়েও সে তার মায়ের প্রতি এক সন্তানের যে দায়িত্ব সেটি মানুষের মতোন যথাযথ পালন না করতে পারলেও..পাকু নিজের থেকে যতোটা সম্ভব তার বাবা ও মা কে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেয়। পাকুর মা ও বাবা সন্তানস্নেহে ও ভালোবাসায় পাকুকে বড়ো করে তুলছে।  


তো বন্ধুরা এই হলো পাকুর জীবনের একটা ছোটো কাহিনী, যেটাকে গল্পের চাঁদরে ঢেকে দিয়েছি আমরা। তোমরা সকলে পাকু এবং তার মা-বাবা ও বাড়ির সবাইকে আশীর্বাদ করো যাতে ওরা ভালো থাকে।


উপরের গল্প রুপী ঘটনাটি ও চিত্রগুলো আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন - Ankita Maitra 

আর তথ্যসূত্র নিয়ে গল্পটি পরিবেশন করেছে - Silient talks of midnight animals

অঙ্কিতা দিদি ও দিদির ছানাপোনা

বন্ধুরা সবাই কেমন আছো? অনেকদিন পর আবারো একটা গল্প নিয়ে চলে এলাম।  যেই গল্পের মুখ্য চরিত্র কাজল, আলু আর মায়াকে নিয়ে। অঙ্কিতা দিই হচ্ছে এই বাচ...