Kolkata Midnight Talk

প্রতিদিন আমাদের সাথে অসংখ্য ঘটনা ঘটে। সেই সকল ঘটনা যেগুলো আমরা কেউ শেয়ার করার মতোন কাউকে পাইনা, আমাদের ব্লগে সেই সকল অজানা গল্প, অবলা পোষ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখা ছাড়াও কিছু লেখকের ভূত ও ভালোবাসার গল্প পাবেন। আশা রাখছি আমাদের পাশে আপনাদের মতোন বন্ধুদেরকে সবসময় পাবো।

LightBlog

Breaking

শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০২০

2.05 এর বজবজ-নৈহাটি লোকালের অজানা গল্প

ছবি - সংগৃহীত 
২.৪০ এর আপ বজবজ-নৈহাটি লোকাল ধরে আসছি। খড়দা থেকে ৩.৩০ এর ট্রেনে উঠেছিলাম। তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে। 
এখন লকডাউনের জন্য ট্রেন বন্ধ আছে, এই ঘটনাটা অনেক দিন আগের..

(কেউ আগে যদি এইরকম বিনা টিকিটে যাত্রার সময় চেকারের কাছে ধরা পড়ে ফাইন গুনেছো তাহলে কমেন্ট করো)  

 সেইদিন এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে আপ রাণাঘাট লোকাল আগে আসা সত্ত্বেও আমি ওর পেছনেই থাকা আপ নৈহাটি লোকাল-টার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এই দুটো ট্রেনের মধ্যে বিশাল রেষারেষি হয়। আর আমি নৈহাটি লোকাল-টা ধরি ফাঁকায় ফাঁকায় আসার জন্য। 

তো খড়দা থেকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আসছিলাম। পেছনে দুইজন অজানা দাদা ছিলো, ওদের সাথে গল্প করছিলাম..টিটাগড় থেকে একটা দাদা ও দিদি ট্রেনে উঠলো।।ওরা ব্যারাকপুর নামবে। দেখেই বুঝতে পারলাম ওরা প্রেমিক-প্রেমিকা। তো ট্রেন ধীরে ধীরে ব্যারাকপুরে ঢুকছে, এদিকে ১ নম্বরে রাণাঘাট আর এদিকে ৩ নম্বরে আমাদের ট্রেন সেই রেস আর কি....তো ব্যারাকপুর আসা মাত্র আমি ট্রেন থেকে নেমে যথারীতি ট্রেনের দরজার হাতল-টা ধরে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে ছিলাম। 

আর ওদিকে ওই ছেলে আর মেয়েটা ট্রেন থেকে সবে নামবে.. ছেলেটা নেমে গেছে..আর দুইজন ভদ্রলোক আর একজন ভদ্রমহিলা ট্রেনে উঠলেন আর ওই মেয়েটা যখন ট্রেন থেকে নামতে যাবে তখনি তার রাস্তা আটকে টিকিট চাইলেন এদিকে আমি সামনের দিকে তাকিয়ে থাকা পথিক আকাশ পাতাল ভেবে যাচ্ছিলাম সিগন্যালের দিকে তাকিয়ে ছিলাম..কখন ট্রেন ছাড়বে..যেইনা ট্রেন হর্ণ দিলো ওমনি উপরে উঠে পড়লাম..পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখি গেটে যেকটা ঝুলছিলো সবকটা হাওয়া হয়ে গেছে আমি বাদে..

আর এদিকে পাশ ফিরে দেখি ট্রেনে চেকার উঠেছে..সত্যি বলতে সেইদিন আমি টিকিট কেটে উঠিনি, ওইদিকে মেয়েটার কাছে টিকিট চাওয়া মাত্রই মেয়েটা বলে, স্যার আমি এইমাত্র উঠলাম..ট্রেন ততক্ষণে আস্তে আস্তে করে তার নিজের গতি বাড়াচ্ছে আরকি..তো মেয়েটা কিছু না ভেবে তার বয়ফ্রেন্ডকে বলে দেয়, তুমি আমাদের দুইজনের টিকিট কেটে পরের ট্রেনে আসো।

মেয়ে - স্যার আমাকে ছেড়ে দিন, ওহহ(বয়ফ্রেন্ড) পরের ট্রেনেই টিকিট নিয়ে আসছে।

চেকার - কোনো কথা শুনবো না, ২৬০ টাকা ফাইন দিন..নাহলে চলুন নৈহাটি জি.আর.পি অফিস, যা বলার ওখানে গিয়ে বলবেন।

মেয়েটা ভয়ে আর লজ্জায় ওর মানিব্যাগ থেকে ২০০/- টাকা দেবেনা দেবেনা করেও দিয়ে দিলো।। আর এদিকে আমার অবস্থা সে যে কি বলবো..যে এইরকম অবস্থায় পড়েছে সেই জানে।
আমি বাইরের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছি..আর যাই হয়ে যাক ভেতরে আমার সামনেই টিটি দাঁড়িয়ে আছে।

আমি এতোটাই ভুল করেছিলাম সেদিন যে..ব্যাগের মধ্যে আইকার্ড টাও রাখিনি।

ওই মেয়েটা তখন আমাকে বলছে..ভাই একটু সরতো আমি পলতা নামবো..আমার গা-হাতপা কাঁপছে কেমন..

আমি সহানুভূতি দেখিয়ে বললাম - আইকার্ড-টা রাখোনি ব্যাগে?আমিও তো টিকিট কাটিনি, (সেইসময় চেকার-টা আমার দিকে একবার ঘুরে তাকালো) তবে আইকার্ড রোজ আমার ব্যাগেই থাকে।

মেয়েটা বললো - আইকার্ড রোজ থাকে আমার সাথে শুধু আজকেই আনিনি।

আমি হিতে বিপরীত হবে ভেবে আর কথা না বাড়িয়ে দরজার বাইরে তাকালাম।

যাইহোক পলতা স্টেশন আসতেই ওই বগির এক প্যাসেঞ্জার আমি যেই গেটে দাঁড়িয়ে ছিলাম ওখান থেকে হন্তদন্ত করে নামতে যাবে, ঠিক তাকেও চেকার-টা ধরে এবং টিকিট দেখতে বলে..ভদ্রলোক এতো চালাক ছিলো তার মানিব্যাগ ভরতি এতো রেলের টিকিট ছিলো সেইগুলো টিটির সামনে একটা একটা করে আঙুল দিয়ে তুলে...ওই ব্যাগের ভেতর টিকিট খুঁজতে খুঁজতে বার বার বলছে...এইতো টিকিট, আরে এইতো টিকিট।
এদিকে ট্রেনের হর্ণ দিয়ে দিয়েছে..সুযোগ বুঝে চেকার-কে ঠ্যালা দিয়ে..লোকটা দৌঁড় দিলো..সে যে কি দৌঁড়।
চেকার-টার সামনে তখন অন্য একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা দাঁড়িয়ে ছিলো। এই দৃশ্য দেখে প্রেমিক ওই চেকার-কে বললো - যা ধরতে পারলেন না। এদিকে চেকার যখন ট্রেনে উঠেছিলো তখন ওই প্রেমিক ও প্রেমিকা কলেজের আইকার্ড বের করে গলায় ঝুলিয়ে নিয়েছিলো।
চেকার কিছু না বলে ভেতরে চলে গেলো। 

চেকার দের মধ্যে একজন মেয়ে চেকার তখন অন্য এক বিনা টিকিটের যাত্রী কে ধরেছে..ওই যাত্রীটির মাসিক মান্থলি কাটা থাকে। কিন্তু তার বৈধতা আগের দিন-ই শেষ হয়ে গেছে, কি দুঃখ জনক ঘটনা।

ওই যাত্রীর কাছ থেকে যখন ফাইন আদায় করে নিয়ে ওই মহিলা চেকার-টা চলে যাবে ঠিক সেইসময় ওই যাত্রী সেই চেকারের আইকার্ডের ছবি তুলে নেয় নিজের মোবাইলে।।ব্যাস তুমুল ঝামেলা..শেষে তো ওই চেকার ওই যাত্রীটির মোবাইল কেড়ে নেয়, এবং বলে নৈহাটি জি.আর.পি অফিস থেকে নিয়ে নিতে।

অন্যদিকে ওই যাত্রী ও বলে উঠে মোবাইল নিয়ে গেলে..খুব খারাপ হয়ে যাবে।। আবোলতাবোল আরও কত কি!!

ওইদিন যে কিভাবে বেঁচে গেছিলাম সেটা আমিই জানি (ঘটনার কথক)

এখানে একটা জিনিস খুব খারাপের সেটি হলো....চেকার যখন ধরলো ওই মেয়েটিকে তখন তার বয়ফ্রেন্ড চাহিলেই ট্রেনে উঠে মেয়েটাকে সেইসময় সাহায্য করতে পারতো....
কিন্তু বিপদের দিনে যে ছেলে একটা মেয়ের পাশে থাকেনা, সেকিভাবে একটা মেয়ের সারাজীবনের দায়িত্ব নেবে?
মেয়েটা যে কি সাংঘাতিক ভাবে ভয় পেয়ে গেছিলো সেটা ওই মেয়েটা আর তার আশেপাশের মানুষেরাই জানেন। অবাক করার মতোন একটা বিষয় এই যে ওই ছেলেটা, তার প্রেমিকা-কে যদি বিয়েও করে পরবর্তীতে, এরপর মেয়েটার যদি পরে কোনো বিপদ আপদ হয় ছেলেটা তখন কি পদক্ষেপ নেবে....

প্রশ্ন একটা থেকেই যায়❓
ইতি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

এখানে বিনা টিকিটে যাত্রা করা যেমন অপরাধ সেইরকমি বিপদের সময় নিজের সাথীকে একা ফেলে পালিয়ে যাওয়া টাও একটা দায়িত্বহীনতা ও কাপুরুষের পরিচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।।

সর্বশেষে টিকিট না কেটে ট্রেনেউঠে কোনো বীরত্বেরকথা নয়, আজ নাহলে কাল আপনি একবার না একবার ধরা পড়বেন-ই পড়বেন।
সামান্য ৫-১০ টাকার টিকিটের জন্য যখন মোটা অঙ্কের ফাইন দিতে হবে তখন সেটা কি ভালো দেখা.. এছাড়া যখন সকল প্যাসেঞ্জারের সামনে আপনার থেকে চেকার ফাইন করবে তখন আপনার সম্মান-টা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ? 

কেমন লাগলো আমাদের এই পেজের এক বন্ধুর অভিজ্ঞতা সেটা আপনারা জানাতে ভুলবেন না। আর আপনাদের কাছে যদি এইরকম কোনো অজানা স্বীকারোক্তি থেকে থাকে যেটা আপনারা কাউকে বলতে পারছেন না তবে আমাদের পেজের  ইনবক্সে মেসেজ করে জানাতে পারেন।

অঙ্কিতা দিদি ও দিদির ছানাপোনা

বন্ধুরা সবাই কেমন আছো? অনেকদিন পর আবারো একটা গল্প নিয়ে চলে এলাম।  যেই গল্পের মুখ্য চরিত্র কাজল, আলু আর মায়াকে নিয়ে। অঙ্কিতা দিই হচ্ছে এই বাচ...