প্রমাণ করতে পারবেন না গল্পের প্রথম পর্ব - (ঘাটশিলা মেমো)
এইখানেই ফেলে দে লাশটাকে!
মালটা বোবা ছিলো তাই বেশী ঝামেলা পোহাতে হয়নি....চল এখান দিয়ে তাড়াতাড়ি কেউ দেখে ফেললে আবার ঝোল হয়ে যাবে....
কিন্তু ওই মেয়েটা যদি পুরোপুরি না মরে তাহলে তো আমরা ফেসে যাবো..
এই তোর মাথা ঠিক আছে? যা অত্যাচার হয়েছে..যে ওই অত্যাচার দেখবে সেও ঘাটে যাবে..আর তাছাড়া ও যদি কথা বলতে পারতো তাহলে নাহয় ব্যাপার ছিলো..এখন এসব আলোচনার সময় নয়..এখান থেকে দ্রুত চল..
কিছুদিন পর....
তোকে আমি তিনটে কাজ দেবো....যারমধ্যে প্রথম কাজটা হলো হাওড়া স্টেশন দিয়ে আমি কিছু জিনিস দেবো পার্সেল করে...ওই পার্সেলটা খড়গপুর পৌঁছাতে হবে,
তবে....
তবে মনে রাখিস প্রথম কাজেই যদি ফেল হয়ে যাস তাহলে তোকে আর আমরা কেউ নিজেদের কাজে নেবোনা....আর আমি যে পার্সেল তোকে দেবো সেই পার্সেল যদি তুই ছাড়া অন্যকেউ খোলে কিংবা যদি হারিয়ে যায় তো তোকে জরিমানা গুনতে হবে..
এবার বল রাজি আছিস?
অভয় - হ্যাঁ রাজি আছি..
তো বেশ দেখ ওপাশের দেওয়ালে যে স্কুল ব্যাগ ঝুলছে ওর মধ্যে একটা পার্সেল আছে....কাল এটা ঠিকমতো পৌঁছে সন্ধ্যাবেলায় এই আড্ডায় দেখা করিস....আর শোন যদি তুই ধরা পড়িস আর কিংবা আমার সাথে কোনো গেম খেলার চেষ্টা করিস তো ভেবে নিবি কালকেই তোর শেষ দিন....মনে থাকে যেন....কাল দুপুর ১.০০ টার মধ্যে খড়গপুর স্টেশনে পৌঁছে যাস....ওখান দিয়ে আমার লোক তোকে খুঁজে ঠিক ব্যাগটা নিয়ে নেবে....এখন যা।। আর যাওয়ার আগে মনে রাখিস এটা একটা খেলা....যেটার রুলস আমি চাইলেই পরিবর্তন হয়ে হবে....
নে..নে এবার যা।।
** অভয় ওখান থেকে চলে আসে....বাইরে বেড়িয়েই অভয়ের চোখ গেলো তার বন্ধু প্রতাপের দিকে **
প্রতাপ - কি রে..কাজটা হলো নাকি হলোনা?
অভয় - হ্যাঁ একদম।
প্রতাপ - কি বলছিস কি....
অভয় - কালকে সকালে হাওড়া থেকে খড়গপুরে এই ব্যাগটি পৌঁছাতে হবে....
প্রতাপ - কি আছে এতে বোম টোম নেইতো? এই যদি ড্রাগস হয়, তো কি করবি? পুলিশ ধরলে তো অনেক দিনের জন্য গ্যারেজ হয়ে যাবো আমরা ভাই। তখন কিভাবে ছাড়া পাবো?
অভয় - ভাই আমি স্বইচ্ছায় গুণ্ডাদের দলের সদস্য হতে চাইছি....তাই এখন থেকে এইরকম আরও অনেক কাজই করতে হবে ভয় পেলে চলবেনা....নে নে, চল এবার কালকের প্ল্যান আমরা কালকেই দেখবো....
প্রতাপ - হ্যাঁ চল....
অভয় - অদূরে তাকিয়ে কাকে যেন হাত নাড়ল, আর অভয়ের মুখে হাসি ফুটে উঠলো....
প্রতাপ - তোর যে মাঝেমধ্যে কি হয়....দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভূত দেখলি নাকি?
অভয় - ভূত নয় রে ভাই..পেত্নী....হা..হা..হা..হা
এবার চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।
** পরেরদিন সকালে **
অভয় দের ট্রেন সবে হাওড়াতে ঢুকবে ঢুকবে করছে....
নীরব অভয়কে একটু ঠ্যালা দিয়ে প্রতাপ বলে উঠলো..তোর কি বুদ্ধি রে ভাই....বাবা, মা বেঁচে থাকলে দেখতিস তুই একদিন বিরাট বড়ো পুলিশ হতে পারতিস....
এই পুলিশের নাম নিবিনা আমার সামনে, আমি বড়ো হয়ে ট্রেন চালক হবো ভেবেছিলাম।। অভয় কথাগুলো একটু কড়া ভাবেই বললো তবে প্রতাপ সেই দিকের তোয়াক্কা না করেই বলতে লাগলো....হওড়া স্টেশনের পুলিশ আর ওইযে স্ক্যান করে যেই মেশিন তার ঝামেলা এড়ানোর জন্য শ্রীরামপুর থেকে ট্রেন ধরলি....যাতে ট্রেনটা তোকে স্টেশনের ভেতর নিরাপদে নিয়ে যায় আর তুই ভেতর ভেতর দিয়ে অন্যট্রেন ধরে খড়গপুর চলে যাস, কারণ প্ল্যাটফর্মের ভেতরে তো সেইরকম চেকিং নেইইই....
অভয় - গেমটা শুরু করেছে উনি, তবে গেম খেলার জায়গা ঠিক করি আমি....
হঠাৎ ফোন এলো.....
ফোনের ওপার দিয়ে..
আমি vk বলছি, তুই এখন কোথায়?
অভয় - হাওড়া ঢুকছি.... ট্রেনে উঠে ফোন করছি....
vk - এখান থেকে এইটুকু আবার ট্রেনে গেছিস..ব্যাপারটা বুঝলাম না তো ঠিক....
অভয় - আমি শ্রীরামপুর থেকে ট্রেন ধরে হাওড়া যাচ্ছি..এরপর ভাবছি ঘাটশিলা মেমু ধরবো..
vk - কিন্তু তুই যে ট্রেনে করে যাবি বলবিতো.....ধর কি যে করিস না তুই....
অভয় - হাওড়া স্টেশন দিয়ে এইরকম স্ক্যানিং আর পুলিশের এর ঝামেলা এই দুটো থেকে বাঁচার জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছি।।
vk - এটা ঠিক করিসনি..যাই করবি আমাকে জানিয়ে করবি..
অভয় - গেম আপনি চালু করলেও..খেলার মাঠ টাও আমাকেই খুঁজে বের করতে হবে তাইনা..
vk - ওকে ঠিক আছে..তবে এতোটও না দেখে গেম খেলিস না যে, দ্রুত গেম ওভার হয়ে যায়। যে কাস্টমারকে তুই ব্যাগটা দিবি..একটু সাবধানে.. কারণ ওই স্টেশনে প্রচুর পুলিশ থাকে..আর হ্যাঁ ওই কাস্টমারের সাথে বেশী কথা বা বিতর্ককে যাবিনা কারণ উনি একটু মেন্টাল ওনার দানবের মতোন বডি হলেও মাথাতে একটু প্রব্লেম আছে..ওনার সাথে বেশী কথা বলবিনা। যাই করিস তবে সময়ের যেন কোনো হেরফের না হয়..নাহলে ওই কাস্টমার চটে যাবে। একবার চটে গেলে রক্ষে নেই।
রাতে কথা হচ্ছে..আমি উনার নাম আর মোবাইল নম্বর মেসেজ করে পাঠাচ্ছি তোকে।
অভয় - ঠিক আছে।
ধীরেধীরে ট্রেনটা প্ল্যাটফর্মের দিকে এগোতে লাগলো....
অভয়ের চোখটা কেমন জানি লেগে এলো....আকাশপাতাল ভাবতে ভাবতে সেইদিন কার কথা মনে পড়ে গেলো....যেইদিন ভি.কে নাইডু (ভিরাজকুমার বা vk)এর কাছে প্রথম গেছিলো কাজের জন্য...ছোটোবেলায় অভয়ের বাবা মা মারা গেছে, কিজন্য মারা গেছে সে সেটা জানেনা, বড়ো হয়ে যেনেছে সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়েরা ভাইয়েরা দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা করছিলো, সেইথেকেই কি তার বাবা-মা নিখোঁজ নাকি অন্য কোনো কারণ আছে সেটা নিয়ে অভয় আজও ভেবে কুল-কিনারা পায়না। অভয়ের নিজের বলতে কেউ না থাকলেও প্রতাপকে নিজের ভাইয়ের থেকেও বেশী ভালোবাসে.. প্রতাপ এর সাথে অভয়ের পরিচয় স্টেশনে..
স্টেশনের একধারে প্রতাপ বসেছিলো..আর স্টেশনেরই কিছু আওয়ারা ছেলে প্রতাপকে মারধর করছিলো..অভয়ের ট্রেন দেখার খুব নেশা ছিলো.. তাই মাঝেমধ্যে স্টেশনে আসতো...আর ট্রেন অজানা যাত্রীদের মধ্যে নিজেকে বিভোর করে রাখতো..
তাই যেইদিন অভয়ের সাথে প্রতাপের পরিচয় হয় সেইদিন তাদের পরিচিত হওয়ার আগের মুহুর্তে অভয় ট্রেন দেখতেই স্টেশনে এসেছিলো...ব্যস স্টেশনে এসেই অভয়ের সবার আগে চোখে পড়ে....একটা ছেলেকে কতগুলো ছেলে ঘিরে ধরে তাকে জ্বালাতন করছে....অভয় ওদের সামনে যেতেই..ছেলেগুলো পালিয়ে যায়....কারণ অভয় বেশ পরিচিত ছেলে ওখানকার....মারপিটে একেবারে মেডেল প্রাপ্ত যাকে বলে, তাইতো ছেলেগুলো দৌঁড় দিলো..প্রতাপকে ধরে অভয় যখন উঠে বসালো..তখন দেখলো প্রতাপের হাত পা ছুঁলে গেছে,
রক্ত বেরচ্ছে, খুব মায়া হলো অভয়ের..যখন অভয় জানতে পারলো প্রতাপের বাবা মা প্রতাপকে ছেড়ে গেছিলো..কীজন্য ছেড়ে গেছিলো সেটা তো অভয় বুঝেই গেছিলো..প্রতাপ একটা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন বালক..অভয়ের ও কেউ নেই, এদিকে প্রতাপের ও কেউ নেই ব্যস সেইদিন থেকে দুইজনে বন্ধুর চেয়ে বেশী ভাইয়ের মতোন মিশতে শুরু করে দিলো....অন্যদের থেকে একটু আলাদা। তবে প্রতাপ অভয়কে খুব ভালোবাসে....এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে স্বপ্নের রাজ্য হারিয়ে গেছিলো অভয়..
হঠাৎ প্রতাপ এক ধাক্কা দিলো অভয়কে....সে বললো..কিরে..এবার নামবি চল ট্রেন প্ল্যাটফর্মে এসে গেছে যে..
অভয় - হ্যাঁ চল....
প্রতাপ ও অভয় দুইজনেই ট্রেনের দরজার দিকে এগোতে লাগলো..
প্রতাপ যখন দরজা দিয়ে নামতে যাবে..তখন পাশে অভয়কে না দেখে পেছনে ফিরে দেখে অভয় ট্রেনের একটা ফাঁকা সিটের দিকে তাকিয়ে আছে....মনে হচ্ছে কার সাথে যেন কথা বলছে....প্রতাপ আবার অভয়কে ডাকলো কিরে যাবিনা??এখানেই ৯.৩০ এর বেশী হয়ে গেলো....এরপর কিন্তু দেরি হয়ে যাবে....
অভয় তখন বললো....ট্রেনের বাইরে দিয়ে একটু উঁকি দিয়ে দেখ..সাবধান মাথাটা বেশী বের করিস না....
প্রতাপ অভয়ের কথা মতোন নিজের মাথাটা সামান্য বাইরে বের করে দেখলো.. স্টেশনে পুলিশ যে সকল যাত্রীরা এই ট্রেন দিয়ে নামলো সেইসকল যাত্রীদের চেক করছে..
প্রতাপ - ভাই....এবার কি হবে??ধরা পড়লেও তো ভাই দুইদিক থেকেই আমরা শেষ..কি করবো এবার??
অভয় - শান্ত ভাবে বললো..পুলিশ কে কেউ খবর দিয়েছে যে এখানে আজ কিছু গন্ডগোল আছে অথবা হতে পারে আমাদের ব্যাপারে কেউ কোনো তথ্যে পুলিশের কাছে আগাম দিয়েছে..
প্রতাপ - ভাই....কে করতে পারে এসব?? ভাই আমার মনে হচ্ছে আজকেই সব শেষ..কেনযে তোর সাথে এইকাজে আসলাম..নেহাত
তাড়াতাড়ি ফুলপ্যান্ট টা ছাড়..ভেতরে হ্যাফপ্যান্ট আছে তো??
প্রতাপ - হ্যাঁ....হাফপ্যান্ট এ কি হবে??
কথা না বলে দ্রুত প্যান্টটা খোল....অভয় ও প্রতাপ দুইজনে ফুলপ্যান্ট খুলে হাফপ্যান্ট পরে নিলো....এবার অভয় নিজের ব্যাগ থেকে বড়ো দুটো বস্তা বের করলো....একটা বস্তার মধ্যে নিজের ব্যাগটাকে ভরলো..আর অন্য বস্তাটাকে প্রতাপ কে দিয়ে বললো..
তাড়াতাড়ি ট্রেনের ওপাশে নাম..এপাড় দিয়ে যাওয়া যাবেনা...
প্রতাপ - কিন্তু ভাই এইভাবে বস্তা নিয়ে নেমে কি হবে??ধরা তো পরেই যাবো..
অভয় - আই আমার সাথে..
(দুইজনেই নীচে নামলো)
অভয় - শোন যদি কোনো পুলিশ কিছু বলে, বলবি এক বাবু কার্সেট এ যেতে বলেছিলো..ওখান থেকে কিছু প্লাস্টিকের বোতল নিয়ে আসতে গেছিলাম, কিন্তু কার্সেটে গিয়ে দেখি....ওরা বোতল গুলো সরিয়ে ফেলেছে..তাই চলে যাচ্ছি।।ওকে..
আর নাহলে চুপ করে থাকবি..বাকিটা আমি দেখে নেবো।।
প্রতাপ - জিও ভাই, তোর পা টা আমার মাথাটা একটু ঠেকাতে দে....কিন্তু যদি আমাদের এই বস্তা চেক করে..কারণ এমন তো কোনো বাধ্যবাধকতা নেইযে, পুলিশরা আমাদের ব্যাগ চেক করবেনা..
অভয় - সে দেখা যাবে তখন।
(এইভাবে রেললাইন পেরিয়ে দুইজনে চললো..ঘড়িতে তখন ১০.২০।
যেই প্ল্যাটফর্ম দিয়ে ট্রেনটা ছাড়বে সেই প্লাটফর্মে দুইজনে এসে হাজির.....দুইজনেই ঘাটশিলা মেমো ধরে খড়গপুর পৌঁছে ব্যাগটা সেই লোকের কাছে দিয়ে আসে..সে রেলওয়ে ওভার ব্রীজের উপরে দাঁড়িয়ে ছিলো)
** সন্ধ্যা বেলায় যখন vk এর কাছে **
vk - সাবাশ, আমি তোর উপর খুব খুশি হয়েছি..আর সাথে এই ভেবে অবাক তুই কিভাবে এতো পুলিশের মধ্যে দিয়ে ব্যাগটা নিয়ে গেলি?? না মানে আমার মাথা কাজ করছেনা আজ জানিস গোটা স্টেশন পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছি..এমন কি ট্রেনে উঠে পর্যন্ত তল্লাশি করেছে পুলিশ....বলনা কিভাবে তুই অসাধ্য সাধন করলি??
অভয় -
আমি আগেই জানতাম..ওই ব্যাগে এমন কিছু আছে যেটা এতো সহজে খড়গপুর নিয়ে যাওয়া যেতো না..এদিকে আবার স্টেশনে বাইরে থেকে প্রবেশ করলে পুলিশ চেকিং কিংবা স্ক্যানার এ ধরা পরার ভয় আছে..সেজন্য আমি বুদ্ধি করে অন্যা প্ল্যাটফর্ম দিয়ে ট্রেন ধরে প্রথমে স্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করলাম।। এখন আমি চেকিং কিংবা স্ক্যানারের হাত থেকে নিরাপদ তবে..স্টেশনে যখন পুলিশ দের সকল যাত্রীদের ব্যাগ চেক করতে দেখলাম তখন আমি কাগজ কুরানি সেজে ট্রেনের উল্টোদিক দিয়ে নেমে আমার গন্তব্য স্টেশনের দিকে এগোতে লাগলাম..কারণ একমাত্র কাগজ কুরানি দের রেল আধিকারিকরা ছাড় দেয়। তো তারপরের অঙ্কটা খুবি সোজা।
আমি স্টেশনে গিয়ে ঘাটশিলা মেমো ধরে খড়গপুর স্টেশনে পৌঁছে গেলাম। মাল ডেলিভারি করলাম..তারপর চলে এলাম।
vk - কিন্তু তুইযে বলেছিলি তুই নাকি পরের ট্রেনে যাবি?তোকেতো ফোন করেছিলাম....
(অভয়ের তখন মনে পড়ে যখন তারা দুজনে ঘাটশিলা মেমো যেই স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে সেই প্ল্যাটফর্মের উদ্দেশে যাত্রা শুরু এগোচ্ছিলো..তখন vk ফোন করেছিলো অভয়কে..
ফোনে অভয়ের কাছে জিজ্ঞেস করছিলো সে ঠিক আছে কিনা, কিভাবে ট্রেনে করে খড়গপুর যাবো..তবে অভয় বুঝতে পারে ব্যাপারটা তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে..তাই ফোনে সে মিথ্যা কথা বলে আমরা অনেক দেরী করে ফেলেছি ঘাটশিলার পরের ট্রেনটা ধরে খড়গপুর যাবো)
কেন জানিনা আমার মনে হচ্ছিলো..আপনার আর আমার কথা কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি শুনছে....নিজের নিরাপত্তার জন্য আমি মিথ্যা বলেছি.....আমি ঘাটশিলা মেমো ধরেই খড়গপুর গেছি।
vk - তা নাহয় মানলাম..কিন্তু পুলিশ তো সব ট্রেন চিরুনি তল্লাশি করেছে....নিশ্চয় ঘাটশিলা মেমো তেও পুলিশ উঠেছিলো....তো তুই সেই তল্লাশি থেকে বাঁচলি কিভাবে? আর যাকে ব্যাগটা দিলি কোনো তার সাথে সমস্যা হয়নি তো?
এটাতো সিক্রেট বলা যাবেনা..তবে সময় আসুক বলবো..আর আমি কাউকে হাতে করে ব্যাগ দিই নিই তো..আমার এখানেও কেমন জানিনা সন্দেহ হচ্ছিলো, এইজন্য স্টেশনের বাইরে একটা টোটো দ্বার করিয়ে ওখানে আমার বন্ধুকে ব্যাগ নিয়ে পাঠালাম..ওকে আগে দিয়েই শিখিয়ে দিয়েছিলাম যে, টোটো ওয়ালাকে বলতে যে আমার এক দাদা তার বাড়ি অবধি যাবে ওর শরীর-টা ভালো না, তাই একটু কমসম করে ভাড়া ম্যানেজ করতে। টোটোওয়ালার দাম মিটিয়ে সেখানে দাঁড়াতে, আর যেই ব্যাগের আসল কাস্টমার কে আসতে দেখবে অমনি ওখান থেকে সাইড হয়ে যাবে।
তো আমরা স্টেশনে নেমেই ওই লোককে ফোন করলাম..আশেপাশে তাকিয়ে দেখছিলাম কে ফোনে কথা বলছিলো..আর তাকে পেও গেলাম। তো আমার বন্ধু কথামতো কাজ করলো..ওদিকে আমি ওই লোকটাকে ফোন করে বলে দিই যে স্টেশনের বাইরে একটা টোটোতে আছি..লোকটা সবশুনে যখন টোটোটাকে খুঁজে নিয়ে সেইদিকে এগোতে লাগলো তো তখন আমার বন্ধু ওখান থেকে চুপচাপ সাইডে সড়ে গেলো..আর ওই লোকটা টোটোওয়ালার সামনে যেতেই ও দূর থেকে বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নিলো..যাতে পরে কোনো কাস্টমার অভিযোগ না জানাতে পারে।
ব্যস এইটুকু....
..আমি আমার এক নম্বর কাজটা সফল করেছি..এবার দুই নম্বর কাজটা দিন..
vk - বটে..এইব্যাপার,
আমি তোকে ডেকে নেবো..
একটা পরীক্ষায় পাশ করেছিস এবার দ্বিতীয় পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত কর নিজেকে। আমার দুইজন বিশ্বস্ত কাজের লোক আবীর আর আকাশ
গত কয়েকদিন ধরে মিসিং..এই নিয়ে একটু ঝামেলায় আছি..
এখন যা এখান দিয়ে..আর হ্যাঁ শোন এই পয়সাটা রাখ নিজের কাছে। এটা তোর ইনাম। যা মজা কর।
(এইবলে অভয়ের পকেটে টাকা ভরে দিলো vk)
এরপর অভয় বাইরে বেড়য়ে আসে..বাইরে তার বন্ধু প্রতাপ অপেক্ষা করছিলো....
অভয়কে দেখে প্রতাপ বলে উঠলো....
প্রতাপ - কিরে ভেতরে কি হলো?
অভয় - সব বলছি আগে আমার সাথে একটা জায়গায় যাবি তোকে সারপ্রাইজ দেবো।।
প্রতাপ - তোকে কি না করতে পারি..চল..
(দুইজনে এগোতে লাগলো...অভয়ের গন্তব্য পথের দিকে..পথে যেতে যেতে অভয় প্রতাপ কে সব খুলে বললো..সবশুনে প্রতাপ অভয়কে বললো)
অভয় - এই প্রশ্নের উত্তর তুই নিজেই পেয়ে যাবি আগে চল আমার সাথে....
প্রতাপ - যাইবল আর তাই বল আজযে আমরা পুলিশের নাকের ডগায় ছিলাম, আর পুলিশ ধরতে পারেনি আমাদের।
অভয় - হুম সৃষ্টিকর্তা সবকিছু মঙ্গলের জন্যই করে...
প্রতাপ - না মানে....কেউ কি সন্দেহ করলোনা একবার যে আমরা ড্রাইভারের কেবিনে থাকতে পারি? জিও তোর ভাগ্যেও হেব্বি সাথ দেয় তোর....নাহলে ট্রেন ড্রাইভার কে হাত করে তার সাথে গোটা রোমাঞ্চকর ট্রেন যাত্রাটা ড্রাইভার কেবিনে করা যেতো....
অভয় - ওই ড্রাইভারটা কে আমি আগে থেকেই চিনতাম....একবার উনি আমি আগে যেই গ্রামে কাজ করতাম সেই গ্রামেরই এক বাজারে বাজার করতে গেছিলেন,বাজার করে আসার পথে.... উনি এক জায়গায় ছিনতাইকারীর হাতে পড়েন..ওনাকে দেখে মনে হচ্ছিলো উনি এখানকার লোক না।
আমি তখন বাড়ি ফিরছিলাম সাথে ছিলো আমার ৭-৮ জন বন্ধু....ব্যাস সে কি মার ছিনতাইকারীদের। শেষমেশ ছিনতাইকারীরা যখন পালিয়ে যায়।
তখন ওই লোকটি জানায় যে, সে এইগ্রামে এর আগেও এসেছে তবে রাতে আসেনি..এখানে তার স্ত্রীয়েএ বাপের বাড়ি....সন্ধ্যা বেলায় বাজার করতে এসেছিলেন..বাজার আর চায়ের নেশা...তাকে দেরী করিয়ে দেয়....যার ফলস্বরূপ তিনি ছিনতাইকারীর হাতে পড়ে....
তার উপর শীতের রাত রাস্তায় কেউ নেই....উনি কাউকে সাহায্যের জন্য চেঁচিয়ে ডাকতেও পারছিলেন না। আমরা ওনাকে বাড়িতেও পৌঁছে দিয়ে আসি....
উনি আমাদের কাছে উনাকে ছিনতাইকারীদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলেন....বিশেষ করে আমাকে বললেন....বাবু জীবনে যদি তোমার সাথে কোনোদিন ও পুনঃরায় দেখা হয় তো তোমাকে সহ তোমার সব বন্ধুদের ঋণ শোধ করে দেবো..
আর সৃষ্টিকর্তার কি কৃপা আজকেই উনার সাথে দেখা হয়ে গেলো....খালি আমাদের একটু মিথ্যা বলতে হয়েছে যে....আমরা খড়গপুর যাবো..আর আমাদের কাছে টিকিট নেই..আর উনার ডিউটি পড়েছে ওই ট্রেনে...ব্যাস...আর দেখলি তো..দুইজনকে একসাথে কেবিনে নিতে প্রথমে একটু না না করলেও পরে বললো উঠে এসো..এগুলো হলো সব ভালো কাজের ফল
প্রতাপ - তুই সত্যিই সেরা
অভয় - ঠিক আছে এখন এখান দিয়ে চল।।তোকে সারপ্রাইজটা দিই।।
দুইজনে হাঁটতে রেললাইনের ধারে একটা বাঁশ বাগানের কাছে হাজির হলো....উঁচু জায়গায় রেললাইন....লাইনের পাশ দিয়ে অনেকটা ঢালু..লাইনের দুপাশে দুটো খাল..লাইনের ডানপাশের খালটা একটু দুরে তবে..তার আগে আছে বাশবন..আর লাইনের বামপাশে কৃষি জমি ও খাল একসাথে রয়েছে।
প্রতাপ - হ্যাঁ রে অভয় এটাতো সেই জায়গা তো যেইখানে আমরা মেয়েটার লাশ এনে রেখে ছিলাম..
অভয় - হ্যাঁ ভাই....সেদিন আমরাই লাশ টাকে এখানে জঙ্গলে এনে রেখেছিলাম..
প্রতাপ - মেয়েটার মুখ দেখে খুব নিস্পাপ মনে হয়েছিলো..হ্যাঁ রে অভয়..আমরা তো ওই মেয়েটার লাশ যেখানে আছে সেইখানেই যাচ্ছি..
অভয় - হুম।
প্রতাপ - চুপচাপ বাড়ি চল আর নাহলে তুই থাক আমি গেলাম.....
অভয় - বেশী কথা না বলে চুপচাপ আই আমার সাথে তোকে একটা সারপ্রাইজ দেবো।।
প্রতাপ - তোর মাথা ঠিক আছে? একেই তো রাতের বেলায় এই জঙ্গলে এনেছিস তার উপর একটা লাশ যেখানে ফেলে রাখা আছে সেইখানে নিয়ে যাচ্ছিস তার উপর বলছিস আমাকে সারপ্রাইজ দিবি??
অভয় - দাঁড়া এবার..ওইদেখ..
প্রতাপ অভয়ের কথামতো অভয় যেখানে তাকাতে বললো সেখানে তাকিয়ে দেখলো....দুটো পুরুষ মানুষ নীচের গর্তে পরে আছে....আর সেখান থেকে ভেসে আসছে পচা গন্ধ।
প্রতাপ (নাক চেপে) - এরা কারা....এরা কারা? কেন এনেছিস এখানে?
অভয় - মনে আছে কয়েকদিন আগে আমরা রাতের বেলায় এখান থেকে কিছুটা দূরে ক্ষেতের আড্ডা মারছিলাম....রাত বেশী হওয়ার কারণে আমরা এই রেললাইন ধরে যেতে যেতে একটা মেয়ের লাশ দেখতে পেয়েছিলাম।
প্রতাপ - হ্যাঁ ওই মেয়েটাকে দেখে আমার খুব মায়া হয়েছিলো তবে আমি ভয়ও পেয়ে গেছিলাম কেউ যদি লাশের সাথে আমাদেরকে দেখে নিতো..তবে সর্বনাশ হয়ে যেত....এইজন্য তোকে বারবার তাড়া দিচ্ছিলাম ওখান থেকে দ্রুত অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য।।
অভয় - হ্যাঁ তবে আমরা শেষে এই লাশটাকে ওই সামনের জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে যাই। এবং সেখানকার এক ছোটো গর্তে ওই মেয়ের লাশটাকে ফেলে দিয়ে আসি।
প্রতাপ - তো..
তাতে কি হয়েছে?
অভয় - ভাই সেইরাতেই গভীর রাতে আমি লাশটার কাছে এসেছিলাম। কারণ ওর মুখ দেখে আমার খুব মায়া লেগেছিলো..জঙ্গলে লাশ থাকলে যদি শেয়াল কুকুর ছিঁড়ে খায় তো? আমি এসে ওই লাশ রাখা গর্তের মধ্য মাটি চাপা দিয়ে দিই..মেয়েটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো মেয়েটা মরার আগে অনেক যন্ত্রণা ভোগ করেছে.....তাইতো মায়ার টানে আমি এখানে এসে মেয়েটার লাশ রাখা গর্তে ভরে বুজিয়ে ফেললাম।
তো আমি যখন এখান থেকে চলে যাবো আমার সামনেই দেখি একজন দাঁড়িয়ে আছে....
আমাকে সে দেখেই বললো - কি করছিলিস এখানে?
অভয় - আসলে আমি....আসলে আমি.....
ওই লোকটি - এতো আমতাআমতা করছিস কেন? এই লাশটাকে তুই এখানে পুঁতে দিলি.....মোবাইল টা বের কর তাড়াতাড়ি??
অভয় - মোবাইল কোন মোবাইল?আর আপনি কে?
ওই লোকটি - জীবনে অনেক মার্ডার করেছি আরও একটা করতে হাত কাঁপবেনা।
এই মেয়েটার লাশ যেখানে পড়েছিলো ওখানে আমার মোবাইল পড়ে যায়, আমি মোবাইল খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসে দেখি তুই লাশটার উপর মাটি চাঁপা দিচ্ছিস....আমি বেশী সময় নষ্ট করতে ভালোবাসিনা মোবাইল-টা দে..
অভয় - প্রতাপ ভাই বিশ্বাস কর আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম....তখনি নীচে পড়ে থাকা এক্কটা গোটা ইট তুলে ওই লোকটার মাথায় ছুঁড়ে মারি....লোকটি মাটিতে পড়ে গেলে.....আমি সেই ইটটা তুলে..লোকটাকে মেরে মেরে শেষ করে দিই....শেষে যখন আমি ওখান থেকে পালিয়ে চলে আসবো তখন দেখি ওখানে আরও একজন লোক এদিকে আসছে ফোনে কথা বলতে বলতে....সে আমাকে দেখতে পাইনি..তবে ফোনে কাকে যেন বলতে বলতে আসছিলো...
আরে আর বলিস না..বোবা মেয়েটার সাথে মজা নিয়ে যখন মেয়েটাকে মেরে রেললাইনের উপরে লাশটাকে ফেলে দিয়ে বাড়ি চলে আসি..তার দুইঘন্টা পর আমাকে আবীর ফোন করে বলে ওহ নাকি রেললাইনে মোবাইল ফেলে দিয়ে গেছে....তাইতো আবার ওর সাথে রেললাইনে এসে দেখি ওখানে লাশ ও মোবাইল কিছুই নেই, সেজন্য আবীর জঙ্গলের ভেতরে যায় কিন্তু এখনো ফিরছেনা বলে আমি নিজেই জঙ্গলের দিকে যাচ্ছি.....
বিশ্বাস কর প্রতাপ আমি আর চুপ থাকতে পারিনি....হাতের নীচে একটা ইট ছিলো তুলে ওটাকেও বিদায় দিয়ে দিলাম
এই দুটো লাশ সেই সয়তান গুলোর.....আর সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় কি জানিস??
প্রতাপ - কি?
এরা হলো vk এর খুব বিশ্বস্ত দুইজন লোক।
প্রতাপ - ভাই এ কি করেছিস তুই?
Vk জানলে তোকে তো মারবে আর সাথে আমাকেও....
আমি কালকেই এই শহর ছেড়ে অন্য জায়গাই চলে যাবো..
তুই নিজেও মরবি আর এদিকে আমাকেও মারবি।।
অভয় - তো??
এখনো তো মরে যাসনি। বাড়িতে চল মনটা খুব হাল্কা লাগছে
প্রতাপ - হ্যাঁ ওখন তো হাল্কা লাগবেই। আমি কালকেই এই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
একে তো তুই vkএর দুইজন খাস লোককে মেরেছিস আবার অন্যদিকে vk এর কাছেই কাজে গেছিস.....জানিস vk কে....
অভয় - আজ যদি তোর বোনের সাথে এই হতো যেটা কিনা এই মেয়েটির সাথে হয়েছে তখন তুই কি তার বদলা নিতিস না?
প্রতাপ চুপ করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে....
চুপচাপ বাড়ি চল....পরের কাজের খবর না আসা অবধি আমরা বরং vk কে কিভাবে ডাউন করা যায় সে বিষয় নিয়ে ভাবতে থাকি৷।
অভয় আর প্রতাপ দুইজনেই এগিয়ে চললো বাড়ির দিকে....তখনি তাদের মাথার উপর থেকে রাত পাখি উড়ে গেলো....আর অস্পষ্ট মানুষ আর পাখির সম্মিলিত গলায় বলে গেলো....সাবধান,সাবধান সামনে খুব বিপদ।।
আলোচ্যে গল্পটির প্রথম পর্বটি ক্রাইম সিরিজ ও ওয়েব সিরিজের থেকে ধারণা নিয়ে লেখা হয়েছে।
এই গল্পটি কোনো স্থান,কাল,পাত্রকে অসম্মান করার উদ্দেশ্যে নিয়ে লেখা হয়নি। আর এই ট্রেনের কনসেপ্ট-টা হাওড়া স্টেশনে প্রবেশের আগে যখন লোকাল ট্রেন গুলোকে দ্বার করিয়ে প্যাসেঞ্জার ট্রেন/এক্সপ্রেস ট্রেন গুলোকে আগে স্টেশনে নিয়ে যায়..তো কিছু লোক সিগনালের ওয়েট না করেই ট্রেন থেকে নেমে সেই প্যাসেঞ্জার কিংবা এক্সপ্রেস ট্রেন গুলোয় সিড়ীর সুবিধায় উপরে উঠে যায় আগেভাগে যাতে স্টেশনে পৌঁঁছানো যায়। আর এই স্ক্যানারের ব্যাপারটি কাকতালীয়..
তো অভয় মাঝেমধ্যে কেন অন্যমনস্ক হয়ে যায়..
আর কার দিকেই বা অভয় তাকিয়ে থাকে..সেটা জানতে হলে সাথে থাকুন..পরের পর্বে এইবিষয়ে কিছুটা রহস্য উন্মোচন করা হবে।
প্রমাণ করতে পারবেন না গল্পের দ্বিতীয় পর্ব - রামপুরহাট মেমো