গল্প - ডাম্বেল ও দুলকিরানী
তথ্য ও ছবি - দেবযানী বান্টি মুখার্জী।
উপস্থাপনায় - silent talks of midnight animals
দেখতে দেখতে বছর-টা শেষের পথে। সেইযে মার্চ মাস থেকে ঘরে ও বাহিরের যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে যা বর্তমানেও ক্রমশ চলমান। তবে বছরের শেষের দিকে বাঙ্গালীরা যে পূর্বে উৎসব ও আনন্দে মেতে উঠতো তা আর এখন ক্রমশঃ অতীত হতে চলেছে। একঘেয়ে জীবন, অশান্তি,বিভিন্ন দায়-দায়িত্বর শিথিলতায় মাঝেমধ্যে মনে হয় সব ছেড়েছুড়ে যদি ছোটোবেলায় চলে যেতে পারতাম তাহলে কি না ভালো হতো। গল্প, কত নাম না জানা খেলা, ভাব-আড়ির স্মৃতি
তো ছেলেবেলায় ফিরে না যেতে পারলেও ছেলেবেলাকে কিছুটা হলেও উপলব্ধি করাই যেয়ে পারে..
আজ আমি আপনাদের বিড়ালের দুনিয়ায় নিয়ে যাবো। যেখানে মারামারি,হিংসা,খুনসুটি না থাকলেও
রয়েছে শুধু গল্প আর গল্প।
আজ যে ভদ্রলোকের সাথে আপনাদের পরিচয় করাবো তার নাম ডাম্বেল। খুব শান্ত ও ভদ্র বিড়াল সে। খেতে খুব ভালোবাসে। মাছভাত,দুধ,কর্ণফ্লেক্স রয়েছে তার পছন্দের তালিকার শীর্ষে।
ছবি - ডাম্বেলবাবু
হি হি..আমাদের ডাম্বেল বাবু কিন্তু সবার থেকে আলাদা গো বাপু।
সকালে যখন ডাম্বেলের মা ( দেবযানী মুখার্জী ) তরকারি কাটতে বসেন তখন ডাম্বেল বাবু তার মায়ের পাশে চুপটি করে বসে থাকে। না না এমনি এমনি বসে থাকেনা তাকে একপ্রকার বসিয়ে রাখতে হয়, নাহলে ফাঁক পেলেই খেলতে বেড়িয়ে যায়। তাকে বসিয়ে রাখার জন্য ঘুষ দিতে হয় গো বাপু।
হ্যাঁ ঠিক শুনেছেন।
ডাম্বেল বাবুর মা যখন তরিতরকারি কাটেন তখন ডাম্বেল-কে পেপে,শশা,গাজর এইসব দিয়ে খুশি রাখতে হয়।
হুম বটে..
আমাদের ডাম্বেল বাবুর ব্যাপারখানা মোটেই আর পাঁচটা বিড়ালের মতোন নয়।
ডাম্বেল বাবুর একজন বোন আছে যার নাম দুলকিরানী। স্বভাবে কিন্তু সে খুব দুষ্টু। যেই খাঁচা-টি আপনারা দেখছেন ওটাই ওর পছন্দের জায়গা। ওর ভেতর দুলকিরানী তার প্রিয় দুইখানা পুতুল নিয়ে ঘুমোয়।
ছবি - দুলকিরানী
এইযে এই খাঁচাটি দুলকিরানীর খুব প্রিয়।
দুইজনে খুব দুষ্টু হলেও তাদের মা দেবযানীর কাছে চোখের নয়নের মণি, বুকের বল।
ডাম্বেল যখন বাইরে থেকে বাড়িতে আসে তখন সে এদিকওদিকে না তাকিয়ে সোজা মা কে ডাকতে থাকে। তার গলার স্বরে তখন এমন এক ব্যকুলতা সৃষ্টি হয় যেন সে তার মায়ের প্রতি খুব চিন্তাশীল তবে তাদের মা দেবযানী যতক্ষণ না অবধি সারা দিচ্ছে ততক্ষণ ডাম্বেল বাবু তার মায়ের খোঁজ করতে থাকবে।
তার গলার স্বরে এইরকম একিটা মাদকতা আছে যেটা কিনা মাঝেমধ্যে সত্যিকারের মানুষের কন্ঠের রূপ নেয়।
বিড়ালের ডাকটা তখন " মা " ডাকের মতোন শোনায়। যদি ডাম্বেল বুঝতে পারে যে..তার মা বাড়িতে নেই..
তাহলে ব্যস বাবুর রাগ অভিমান করে বোসে।
আর এদিকে দুলকীরানী তার মা ( দেবযানী ) ছাড়া কিছুই বোঝেনা। সারাক্ষণ যতোই দুষ্টুমি করুক না কেন..যেই তার মা একটু ডাক দেয়..ব্যস মহারানী যেইখানেই থাকুক দৌঁড়ে চলে আসে।
এদিক থেকে দেখলে দুইজনেই তাদের মায়ের বাধ্য সন্তান। তাদের মা ও তাদের দুইজনকে খুব ভালোবাসে..
দেবযানী একজন আদর্শ মা হয়ে উঠেছেন। তিনি তার সন্তানদের মুখের দিকে তাকালেই বুঝে যান তাদের কি হয়েছে..তাদের অসুবিধা কি।
বাচ্চাগুলোর মা দেবযানীর যখন খাটে বসে থাকে..তখন যদি ডাম্বেলের মায়ের কোলে উঠার ইচ্ছা হয়..সেক্ষেত্রে বাবু এমন করুণ দৃষ্টিতে তাকাবে তার মায়ের দিকে..সেই দৃষ্টি দেখে মা বুঝে যান যে..ছেলের এখন কোলে উঠতে চাইছে।
কিন্তু দুলকিরানীর ব্যাপারটা আলাদা। ওহ নিজের ইচ্ছায় চলে। ওর দুনিয়া হলো - ওর মা। ওর যতো আবদার সব মায়ের কাছেই।
ওদের নিয়ে কথা বললে কথা শেষ হবেনা। আসলে ভালোবাসাটাই আসল। আমরা যারা বাড়িতে বিড়াল কুকুর পুষি তারা সকলেই ওদেরকে নিজেদের পরিবারের সদস্য হিসেবেই দেখি।
মাঝেমধ্যে ভাবতেও অবাক লাগে যে, কুকুর বিড়ালের মতোন এই নিরীহ প্রাণী গুলো প্রতিদিন কোনো না কোনো কারণে পৃথিবীর কোনো না কোনো জায়গাই অত্যাচারের স্বীকার হয়ে উঠছে।
ফেসবুকে চোখ পাতলেই এইরকম হৃদয় বিদারক দৃশ্যে প্রায় চোখে আসে।
তবে এই গল্পের যিনি মা হিসেবে পরিচিত, হ্যাঁ তার নাম দেবজানী মুখার্জী। তিনি সত্যিই একজন পশুপ্রেমী হলেও। তার কৃতিত্বের শেষ নেই।
তবে ওইযে কথাই আছেনা অতিত নামক এক হৃদয়হীন বস্তু। যা সত্যিই খুব কষ্টকর।
ডাম্বেলের ছোটোবেলার ছবি
এই দুটো বিড়াল প্রত্যেকেই কুড়িয়ে পাওয়া। দেবযানী দুইবার-ই ভিন্নভিন্ন জায়গা থেকে বিড়াল গুলোকে কুরিয়ে পেয়েছে।
দিনটা ছিলো ১৫ নভেম্বর, ২০১৫ সাল। এক কি দেড় মাস বয়স হবে ডাম্বেলের৷ নিজেই হেঁটেহেঁটে আসছিলো। তারপির জঙ্গল টপকে দেবযানীদের বাগানে ঢুকে যায়। অতীব পাকা ছোকরাটাকে দেবযানী পরম স্নেহের সাথে বাগান থেকে তুলে ঘরে আনে। ঘরে ঢুকেই খেলাধুলা শুরু করে দেয়। সে তার রুপের ডালি দেখিয়ে সবার মন জয় করে। শুরু হলো এক নতুন ইতিহাস, সাথে একটা নতুন নাম ডাম্বেল।
দেবযানী আমফানের আগের দিনের সকালে রাস্তা থেকে কুরিয়ে পায়। রাস্তায় কেউ ছেড়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলো বিড়ালটিকে। বিড়ালের বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনে তাড়াতাড়ি করে দৌঁড়ে গিয়ে দেখে.. একটা ছোটো বিড়ালের বাচ্চা রাস্তায় পড়ে আছে।
দেবযানীর খুব মায়া হয়। সে আর পাঁচজনের মতোন মুখ ঘুরিয়ে যেতে পারেনি সে ওই বিড়ালের বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। খুব কষ্ট করে ওকে বাঁচানো হয়। ড্রপারে করে দুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে যত্ন..কোনো কিছুতেই সে ত্রুটি রাখেনি। ধীরেধীরে সেও বড়ো হয়ে চলেছে। আপনারা সবাই আশীর্বাদ করবেন।
সত্যিই কত বিচিত্র এই দেশ। যেখানে প্রতিনিয়ত বিড়াল কুকুরেরা রাস্তায় কোনো না কোনো ভাবে অপদস্থ হচ্ছে। কেউ বাড়িতে বিদেশী কুকুর পুষছে..দুইদিন পর সখ মিটে গেলে গোপনে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছে।
আবার, কেউ কেউ এমনও আছে বিড়াল,কুকুর দের নিয়ে ফেসবুকে অজস্র ভালোভালো ছবি ছাড়ছে..ক্যাপশনে লিখছে..আজ আমার বাচ্চা-টা বিছানার চাদর ছিঁড়ে দিয়েছে খুব দুষ্টু।
আজ আমার বাচ্চাটা আমাদের পাতের খাবারে মুখ দিয়ে দিয়েছে..আমরা একসাথে খাবার খেয়েছি। ওহ বিড়াল বলে কি মানুষ নয়।
কিন্তু বাস্তবে হয়তো তাদের মধ্যেই অনেকেই আছেন ( দুইদিনের পশুপ্রেমী ) তারা এইসব ঘটনায় ভয়ঙ্কর শান্তি দেন তাদের পোষ্যদের।
সেইখানে দেবযানীর মতোন অনেকেই আছেন। যারা রাস্তায় ফেলে দেওয়া বিড়াল কুকুরকে বাড়িতে এনে মাতৃস্নেহে বড়ো করে তোলে।
আমাদের তরফ থেকে দেবযানীর মতোন একজন আদর্শ মা'কে স্যালুট জানাই।
মায়ের সাথে ডাম্বেলের ছবি
তো বন্ধুরা এই হলো একজন আদর্শ মা ও তার ছেলে মেয়ের গল্প। আমাদের গল্পটা কেমন লাগলো অবশ্যই জানিও। আর তোমাদের কাছে এইরকম গল্প থাকলে আমাদের কাছে অবশ্যই পাঠিও।