আজ আমি আপনাদের পায়েল নামের একজন বিড়ালপ্রেমীর গল্প শোনাবো। তবে এই গল্প আর পাঁচটা গল্পের মতোন নয়। একটু আলাদা। গল্পটা অনেকেরই পছন্দ নাও হতে পারে তবে যার জীবনের এই গল্পটি আমি লিখতে চলেছি তার আবেদন ও বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা দেখে আমি কলমটিকে ভাসিয়ে দিলাম একটা অন্যরকম দুনিয়ায়, হ্যাঁ এটাই সেই দুনিয়া যেই দুনিয়ায় হিংসা,শত্রুতার পরিপ্রেক্ষিতে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার যুগলবন্দী পরিলক্ষিত হয়।
ছবি - Payel Karmakar
বছরটা ছিলো তখন ২০১২। কোনো এক অজানা তারিখে শনিবারে রাস্তার একধারে পড়েছিলো সম্ভবত দুই-তিনদিন আগেই জন্মানো সদ্যোজাতও এক বিড়ালছানা। বিড়ালের ছানাটির মুখ এতোটাই মায়াবী যে রাস্তা দিয়ে কোনো এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে যাওয়া পায়েল কর্মকারের মনে আচঁড় কাটে। না সে কিন্তু রাস্তার বাকি লোকেদের মতোন ওই রক্তমাখা বিড়ালছানাটি কে দেখিয়ে এড়িয়ে যাইনি..সে তখন তার নিজের পরম স্নেহের হাতদুটো বাড়িয়ে দিয়েছিলো সেই বিড়ালছানাটির দিকে।
যখন ওই রক্তমাখা বিড়ালছানাটিকে পায়েল নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে..তখন বাড়িতে তাকে কিছুসময়ের জন্য সাময়িক টানাপোড়েনের মধ্যে পড়তে হয়েছিলো।
পায়েলের এক আপনজন ( নামটা উল্লেখ করলাম না) তিনি বলেন - শনিবারে তুই বাড়িতে বিড়াল এনেছিস?বিড়ালটা যদি মারা যায় তো ঘোর অকল্যাণ সংসারে এসে ঠাই নেবে।
পায়েল সেই কঠিন সময়ে নিজেকে শক্ত করে বলে উঠে - আমি ওকে মরতে দেবোনা, ওকে যেকরেই হোক আমি বাঁচাবো। ওকে বাঁচতেই হবে।
ব্যস তারপর থেকে শুরু সেই বিড়ালছানাটির পথচলা। আস্তে আস্তে এই আদুরে মেয়ে বিড়ালছানাটি পায়েলের লাইফ লাইন হয়ে উঠলো।
বিড়ালছানাটি পায়েলের ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছিলো অসময়ের বিকেলের মনখারাপের সঙ্গী। আর সঙ্গী থেকে সে পায়েলের মেয়ে হয়ে উঠেছিলো।
বিড়ালছানাটি পায়েলকে হেরে না যেতে শিখিয়েছিলো।
শুধু কি তাই?
যখন মন খারাপের মেঘ কাল বৈশাখীর বৃষ্টিপাত শুরু করতো, বিভিন্ন খারাপ স্মৃতি, অভিজ্ঞতা পায়েলকে যখন বিষিয়ে তুলতো তখন পায়েলের একমাত্র সঙ্গীর থেকেও বড়ো তার একমাত্র মেয়ে মানু..পায়েলকে জড়িয়ে ধরে শুতো।
বিড়ালছানাটি কথা না বলতে পারলেও সে পায়েলকে বুঝিয়ে দিতো..ভেঙে পড়িস না,সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আছি না তোর সাথে।
পায়েল তার মানুর কথা বলতে গিয়ে বলেছেন যে,
ও খুব ছবি তুলতে ভালোবাসতো।
আর ওর ভালোলাগার মধ্যে ছিলো সিরিয়াল। হ্যাঁ ও সিরিয়াল দেখতে খুব ভালোবাসতো। আর সেইদিনের সেই বিড়ালছানাটি সবথেকে বেশী মনের কথা শেয়ার করতো তার মা পায়েলের সাথে।
যখন সারাদিনের অফিস সামলে ক্লান্ত শরীরটাকে কোনো রকমে টেনেটুনে বাড়ির গেটের কাছে নিয়ে আসতো..তখন সেই গেটের দরজায় অপেক্ষা করতো তার সেইদিনকার সেই রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া বিড়ালছানাটি..যাকিনা প্রতি বছরে একটু একটু করে বেড়ে উঠছিলো।
পায়েলের সারাদিনের অফিসের ক্লান্তি নিমেষে দূর হয়ে যেত তার প্রিয় বিড়ালটিকে দেখলেই। পায়েল তখন ওকে নিয়েই ঘরে প্রবেশ করতো আর একসাথে খাওয়াদাওয়া করতো।
বিড়ালটির প্রিয় খাবারের তালিকাতে কিন্তজ মাছ,গোলাপজামুন আর দই ছিলো সবার আগে।
বিড়ালটিকে জামা পড়িয়ে সাজানো হোক কিংবা ওর সাথে ছেলেবেলার ন্যায় খেলা করা সবেতেই কোনো কমতি ছিলোনা দুইপক্ষের।
কিন্তু ওইযে ভালোবাসায় একটু হলেও বেদনাময়।
Pyometra নামক এক জটিল রোগ ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো পায়েলের কাছ থেকে পায়েলের মেয়ে মানুকে।
পায়েল যখন বুঝতে পায় তার বিড়ালের শরীরে কোনো মারণ রোগ বাসা বাধছে তখন সে সাথে সাথে চিকিৎসা করায়। চিকিৎসা করানোর পরেও বাঁচতে পারেনি মানু।
চলে গিয়েছিলো সে না ফেরার দেশে।
ভীষণ ভেঙে পড়েছিলো পায়েল।
তবু পায়েলের বিশ্বাস ও ছিলো,ও আছে, ও থাকবে।
২০১২-২০২০
২৮/০৫/২০২০
দিনটি সত্যিই কি বেদনাদায়ক। নাহলে কেন একটা মায়ের কোল খালি করে একজন সন্তান তার মাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যায়।
লেখাটি কার কেমন লেগেছে জানিনা..তবে লেখাটি সত্যিই বেদনাদায়ক।
ইতি - Manu
পায়েলের - মান্তাই
ভালো থাকুক পায়েল, এবং ভালো থাকুক তার সেই সেদিনকার ছোটো বিড়ালছানাটি
পুরো ঘটনাটি সত্য কাহিনীর উপর ভিত্তি করে লেখা। যার সাথে এই ঘটনাটি ঘটেছে তার নিজস্ব অনুমতি ও অভিমতের ভিত্তিতে ঘটনাটি আমরা সাজিয়ে তুলেছি যাকিনা পায়েলের স্মৃতি হয়ে থাকবে। ঘটনাটি কোনো বিশেষ জাতি বা পশুর অত্যাচারকে, কোনোরকম অন্ধবিশ্বাস কে সমর্থন করেনা।