ছবি- Lahari Bhattacharjee
উপস্থাপনায় - Silient Talks Of Midnight Animals
তো বন্ধুরা সকলে কেমন আছো? আমাদের পেজের গল্প গুলো কিরকম লাগছে তোমাদের? আমাদের উদ্দেশ্যে সকলের কাছে অবলাপ্রাণীদের প্রতি ভালোবাসা সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এইজন্য সবসময় চেষ্টা করি তোমাদের জীবনের অভিজ্ঞতা গুলোকে গল্পের গহনাতে ভরিয়ে উপস্থাপনা করতে। যাতে যেসকল মানুষেরা পূর্বে অবলা প্রাণীদের উপর একটু হলেও অবজ্ঞা নজরে দেখতো তাদের পাষাণ মন গলে কচি সবুজ ঘাসে পরিণত হয়। তাই এই প্রচেষ্টা।
প্রতিটা মানুষের জীবনে এমন একটা সময় আসে যেই সময়টার স্বাদ তারা বার বার পেতে চায়। সেই সময়টাকে খারাপ সময়ে আঁকড়ে বাঁচতে চায়। কিন্তু চেয়েও পায়না। যতোই বয়স বাড়ে ততোই নানা ধরনের সময়ের সাক্ষী থাকি আমরা..
আসলে বয়স হচ্ছে শুধু একটা সংখ্যার খেলা। যেটার খেলা আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে,বিভিন্নসাজে দেখে এসেছি। কিন্তু ছোটোবেলার স্বাদ পেতে কার না ভালোলাগে??
আমাদের পেজটি তো আর রুপকথার পেজ না..পশুপাখি দের ভালোবাসায় ভরা আপনাদের প্রিয় ফেসবুক পেজ - silient talks of midnight animals ( stoma ) পেজটি আজ আবারো চলে এসেছে এক ভিন্ন স্বাদের গল্প নিয়ে।
আজ আমি তোমাদের ভিন্নস্বাদের একটা ছোটো গল্প শোনাবো।
কলকাতা থেকে অনেকটা দূরে নিউ জলপাইগুড়ির আশেপাশের কোনো এক জায়গাতে ২০১৮ সালের ২৮ শে জুন শুরু হয়েছিলো। ওইদিন ফুটফুটে কোকো নামের এক বিড়ালছানার জন্ম হয়। দিনটা আর কারুর জীবনে স্মরণীয় হোক কিংবা না হোক লাহরী ভট্টাচার্য নামের একজন বিড়ালপ্রেমীর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার কাছে সেইদিন কোলজুড়ে আসে কোকো সোনা। কোকো খুব দুষ্টু মেয়ে। কোকোরা হলো যমজ, কোকোর অন্য বোনের নাম চকো।
ছবি - চকো
কোকোর মা লহরী খুবই দায়িত্ববান। সে তার সন্তানদের যত্নের কোনো ত্রুটি রাখেনা। বন্ধুরা আসুন আপনাদের একটু অতীতে নিয়ে যাই। এইযে লাহরীর কথা আপনারা শুনছেন ওনার এককালে ৩৬-টা বিড়াল ছিলো। ছানাপোনা, মাঝারি, ও বড়ো বিড়াল মিলে মোট ৩৬-টা বিড়াল ছিলো। তবে তিনি যেহেতু ফ্ল্যাটে থাকতেন। আর বাচ্চাগুলো একে অন্যর সাথে মারপিট করতো এছাড়া নানান রকমের সমস্যায় পড়েন তিনি। তাই তিনি বাচ্চাগুলোকে ভালোঘরে দত্তক দিয়ে দেন। যাতে ওদের কোনো কষ্ট না হয়।
লাহরী মত অনুযায়ী - আমরা চাইলেই ওদের অনেকভাবে সাহায্যে করতে পারি। কারুর বাড়িতে যদি অবলা পোষ্যদের রাখতে কোনো অসুবিধা হয় তো তাদের দত্তক দিয়ে দেওয়া উচিৎ। যাতে তারা সকলে ভালো একটা ঘর ও পরিবার পায়। লাহরী অত্যন্ত কষ্টের সহিত বাচ্চাগুলোকে অন্যর বাড়িতে তুলে দিয়ে আসে। তবে এইসব একদিনে হয়নি। সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে কোকোর যখন একে একে সব ভাইবোনেরা অন্যত্র চলে যেতে শুরু করেছিলো। তখন কোকোর ও মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেছিলো।
তো গল্পে আসা যাক। আমাদের কোকো রানী। খুব দুষ্টু৷ নিমেষের মধ্যে কোথায়,কি কাজ করে ফেলবে আপনি ধরতে পারবেন না। কোকোর জন্ম হয়েছিলো তার মা লাহরীর ঘরেই। পুঁচু নামের একটা বিড়াল কোকোর জন্ম দেয়। এই পুঁচুরও একটা ইতিহাস আছে..সে যখন খুব ছোটো ছিলো তখন তার মা, তাকে মুখে করে লহরীর বাড়িতে এনেছিলো। লহরী তিনবছর পুঁচুকে নিজের কাছে রেখে বড়ো করে। তবে পরবর্তীকালে সে তার প্রিয় পুঁচুর আরেক মেয়ে চকোকে দিদার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
ছবি - পুঁচু কোকোর মা
সকালে কোকোর মায়ের ঘুম ভাঙে কোকোর ছোটো-ছোটো হাতের মার খেয়ে। যদি তার মায়ের ঘুম ভাঙতে ন'টার এক মিনিটের ও বেশী হয়। তাহলে পুচকে কোকোর নাকি রাগ হয়। বাড়ির প্রত্যেক-টা জিনিস তার দখলে। ঘরের কলিংবেল বাজলে আগে কোকো ছুটে গিয়ে দেখতে যাবে, যে কে এসেছে তার বাড়িতে। যেই আসুক না কেন তাকে ঘর অবধি নিয়ে আসা, আবার যাওয়ার সময় বাইরে দৌঁড়ে গিয়ে ছেড়ে দিয়ে আসাও তার বড়ো এক দায়িত্ব। ঘরের মাইক্রোওয়েভে কেউ হাত দিতে পারবেনা। ওটাও কোকোর দখলে। ওইখানে কোকোর খাবার গরম হয়।
কোকো তার সারাদিনের মনের কথা তার মায়ের সাথেই শেয়ার করে। কোকোর মা কোকোকে প্রচন্ড ভালোবাসে। এইজন্য সে তার মেয়ের মনের কথা কিছুটা হলেও বেশ বুঝতে পারে। কোকোর মায়ের উপর কোকোর কোনো কারনে রাগ হলে সে তার নিজের ছোটো দুটো হাত দিয়ে মারে। বেশীর ভাগটাই গালেই চড় গুলো দেয়..তবে সেটি তার মা বেশ উপভোগ করে।
কোকো এমনি খুব দুষ্টু হলেও যদি বাড়ির কেউ কোকোকে বকা দেয়। তাহলে কোকো সোজা তার মায়ের কাছে দৌঁড়ে গিয়ে কোলের উঠে শুয়ে পড়ে। যতক্ষণ না পর্যন্ত যে বকা দিয়েছে সে এসে নিজের থেকে কোকোকে কোলে তুলে আদর না করে ততক্ষণ অবধি কোকোর রাগ ভাঙেনা।
কোকোকে দিনে তার মা পাঁচবার খেতে দেয়। কোকোর আবার পছন্দের খাবারের তালিকাটা একটু বড়ো। কোকো ইলিশ ভাত খুব ভালোবাসে। এছাড়া ছোটো মাছ ভাজা, পুডিং, মুড়িও বাদ যায়না। মুড়ি খেতেও কোকো পছন্দ করে। এছাড়া সে pedigree..ভালোবাসে। কোনো কোকো দিন কোকো দুপুরে খাওয়ার সবে ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়। তখন কোকো এসে তাকে আস্তে করে ডাক দেয়..মুড়ি খাওয়ার জন্য। তবে কোকোর মা তখন কোকোকে আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
কোকোর মা কোকোকে ছাড়া এক মুহুর্ত অন্য কিছু ভাবতে পারেনা। আর কোকোও সে তার বেশীরভাগ সময় তার মায়ের সাথে কাটাই।
আমাদের কোকোর সবথেকে মহৎ যে গুন সেটি হলো..হেডফোন দেখতে পেলেই হয়েছে মুখে করে নিয়ে খাটের নীচে চলে যায়।
কোকো যখন হেডফোন নিয়ে খেলতে ব্যস্ত ছিলো তখনকার ছবি।
কোকোর মা যখন মাঝেমধ্যে ড্রয়িং করতে বসেন তখন কোকোও তার পাশে বসে থাকবে..সেই সুযোগ পাবে ওমনি পেন্সিল-টা মুখে নিয়ে কামড়ে ভেঙে দেয়। কোনো কোনো সময় পেন্সিল-টা ভেঙেও যায় কামড়াকামড়িতে। কোকোর মা, ভায়োলিন বাজানোর সময় Bow টাকে ধরার জন্য কোকো অপেক্ষা করতে থাকে। দুষ্টুমিতে সে কারুর থেকেই কম যায়না।
আর এসব এতো দ্রুত হয়যে। সেগুলো ক্যামেরা বন্দি করা যায়না।
তো বন্ধুরা এটাই ছিলো আমাদের কোকোসোনার গল্প। তোমরা সকলে কোকো ও তার মা লহরীকে আশীর্বাদ করো যাতে ওরা সারাজীবন এভাবেই একসাথে থাকতে পারে।