(পাড়াতে গোলটেবিল বৈঠক চলছে)
ওইযে শীল বাড়ির মেয়েটা..কিযেন নাম হ্যাঁ রিমা..ওই মেয়েটাকে জানো একটা ছেলের সাথে দেখলাম..দুইজনের পিঠে ব্যাগ ছিলো..আমার মনে হয় বাড়িতে পড়তে যাওয়ার নাম করে পার্কে গিয়ে ফষ্টিনষ্টি করে..মা গো মা..কি নোংরা, কি নোংরা। আর এদিকে রিমার মা সারা পাড়াধরে বলে বেলায়..
আমার মেয়েকে ছেলেদের সাথে মিশতে দিইনা..নেকামো যতসব..
আরে ধুর...(পাশ থেকে কেয়া বৌদি বলে উঠলো)
এ তো কিছুই না..পাশের পাড়ার ওই স্বামী-স্ত্রী দুইজনে রেলে কাজ করে..ওনাদের বাড়ির ছেলেটা অভয় না কি নাম যেন..ডাক নাম আবার দুষ্টু..ওর কথা তাহলে তুমি জানো না দেখছি..বাবা মা কাজে চলে গেলে....রোজ নিত্যনতুন মেয়ে ঘরে ঢোকে..
মিতালি কাকিমা - আরে ওই ছেলেটা তো বাড়িতে কম্পিউটারে কিযেন ফর্ম টর্ম ফিলাপ করে শুনেছি..
কেয়া বৌদি - আরে রাখো তোমার কম্পিউটার..ঘরের ভেতর কি লটরপটর চলছে সেইগুলো কেইবা দেখতে যাচ্ছে??রিমা আর অভয় এক জলের কুমির..এরাযে পাড়ায় থাকে কেন বুঝিনা..এতো জঘন্য কাজকর্ম করে..মা গো মা..আমার তো গা ঘিনঘিন করে..এসব নোংরামো দেখলে..
(পাশ থেকে মিতালি কাকিমা) - আরে রিমার বাবা তো আবার এক ডিগ্রি উপরে..
কেয়া - কেন উনি কি করলো..
মিতালি কাকিমা - আর বলোনা দিদি..সংসারের কাজকর্ম করে ঘুমোতে ঘুমোতে রাত ১২.০০ টা, ১.০০ টা বেজে যায়..সকালের দিকে যেই ঘুমটা একটু গভীর হয় ওমনি রিমার বাবার চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়।
ব্যাটা রোজ ভোরবেলা পাড়ার সব কুকুরকে জড়ো করে বিস্কুট খাওয়ায়..
এমন চিৎকার করে কুকুর গুলোকে ডাকেনা, বিশ্বাস করো..আমার ঘুম ভেঙে যায়..আর তারপর আর ঘুম-ই আসেনা..আর তারউপর কুকুর গুলো খাওয়া হয়ে গেলেও দাঁড়িয়ে থাকে..সকলে মিলে এতো চেঁচামেচি করেনা মাথা ধরে যায়..মাঝেমধ্যে মনে হয় কুকুর গুলোর গায়ে জল ছিটিয়ে আসি।
কেয়া বৌদি - হ্যাঁ..ঠিক বলেছো..রাস্তার কুকুরদের খাবার দেওয়ার কি আছে?..ওই অভয় ছেলেটাকেও দেখেছি রোজ সকাল-বিকাল কুকুরদের নিয়ম করে খেতে দেয়..কত ভালো ভালো খাবার গুলো নষ্ট করে এভাবে..আমরা শালা পাইনা, আর এদের দেখো খাবার পেয়েও নষ্ট করে..পয়সা বেশী হয়ে গেছে এদের..একটু অপেক্ষা করো..তারপর খেল দেখাবো ওই হারামজাদাদের..
মিতালি কাকিমা - কেন??কি করবি??
কেয়া বৌদি - আরে পাড়ার ক্লাবের ছেলেগুলো..আমাকে একটু বেশী সন্মান দেয়..আমার ইশারায় উঠে আর বসে..এবার ওই ছেলেদের বলে দেবো..পূজোতে বেশ মোটা টাকার চাঁদা কাটতে ওই দুই বাড়িতে..নাহলে জব্দ হবেনা হারামজাদা গুলো।
তখন কুকুরদের বিস্কুট দেওয়া ভালোভালো খাবার খাওয়ানো আর রিমার বাবার ভোরবেলা আদিখ্যেতা করা বেড়িয়ে যাবে বাপবাপ করে....
মিতালি কাকিমা - জিও কেয়া, তোর বুদ্ধিকে পেন্নাম জানাই।
এখানে রিমা ও অভয় কেন জানেন এইরকম সমালোচনার স্বীকার হচ্ছে??
একটু খেয়াল করে দেখবেন..প্রত্যেক-টা পাড়াতে একটা নির্দিষ্ট সময়ে একটা গোলটেবিল বৈঠক বসে....যেখানে কিছুনা....কার বাড়িতে কি হলো??কার ছাদ দেওয়া বাড়ি হলো??পাশের বাড়ির মেয়েটা এতো রাতে বাড়ি ফেরে কেন??এইসব খুঁটিনাটি সহ অনেক জিনিস আলোচনা হয়....এই আলোচনায় যারাযারা থাকে তারা যদি দশটা ভুলও করে তখন কেউ ঘুরেই দেখবেনা..কারণ গোলটেবিল বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলে কথা..
এখানে রিমা ও অভয়ের দুইজনের পরিবার এইসব আলোচনায় অংশগ্রহণ করেনা। কারণ যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত।।
অভয় হয়তো সত্যি সত্যি ফর্ম ফিলাপ করছে..আর ওইদিকে রিমা মেয়েটা হয়তো যে ছেলেটার সাথে কথা বলছে সেই ছেলেটা ওর পরিচিত।। কিন্তু এইসকল লোকেরা এইবিষয়-টাকে সবসময় অন্য ভাবে দেখবে। সত্যিটা যাই হোক না কেন..
আর আজ যদি রিমা ও অভয়ের পরিবার এই গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করতো তাহলে ব্যাপার-টা কি হতো??
এই জানো??পাশের বাড়ির রিমা মেয়েটাকে রাস্তায় একটা ছেলের সাথে দেখলাম..দুইজনে পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা করছিলো..বাবারে এদের কেও দেখি আর আমার ছেলেটাকেও দেখি সারাদিন মোবাইল নিয়ে গেম খেলতে থাকে।।
এই পাশের পাড়ায় ওই অভয় কে দেখেছো..রোজ কুকুরদের ডেকে দুইবেলা ভালোমন্দ খাওয়ায়..সত্যি এরাযে অবলাপ্রাণীদের এতো ভালোবাসে..আর রিমার বাবা সে তো ভোরবেলা হলে পুরো পাড়ার কুকুরদের বিস্কুট খাওয়ায়..সত্যি এরা মাটির মানুষ।।
- হ্যাঁ ঠিক বলেছো..ওই দেখো রিমার বাবার বাড়ির সামনে কুকুর গুলো জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে....কুকুর গুলো কিযে খেলা করে..মা গো মা....সত্যি মনটা ভরে যায় এসব দেখলে।
হ্যাঁ ঠিক আমাদের মতোন ওরাও নিজেদের মধ্যে কথা বলে..আমরা যেমন গল্প করি..ওরাও গল্প করে..
- আচ্ছা কুকুররাও কি পি.এন.পি.সি করতে পারে??
মানুষরা যদি একে উপরের পি.এন.পি.সি করতে পারে তবে নিশ্চয়ই ওরাও নিজেদের মধ্যে পি.এন.পি.সি করে থাকে..
এখানে রাগ হলেও রাগটা মনে মনে রেখে দিয়েছে প্রতিবেশীরা।
লেখাটি পুরোটাই কাল্পনিক..
ছবি - নিজস্ব