ছবি ও তথ্য - Poulami Acharjee
উপস্থাপনয় - Silient Talks Of Midnight Animals
হেই বন্ধুরা আমরা সকলেই জানি আমাদের জীবনের দাঁড়িপাল্লায় এমন একটা সময়ের ওজন পরিমাপ করতে হয় যেটার ফলাফল ওজন পরিমাপক ব্যাবহার করে হোক কিংবা না করে ফলাফল সবসময় চাহিদার বিপরীতে আসে। কারুর বংশে ছেলের সংখ্যা বেশী, আবার কেউ লাখ তপস্যা, তাবিজ কবজ, এই মন্দির ওই মন্দির। এই আমাবস্যায় পূজা করো তো আমাবস্যায় ওই করো, ওই গাছে সুতো বাঁধো, ওই ব্রত রাখো..গঙ্গা স্নান করো।
মানে মানুষ কে যে কত হেনস্থা করা হয় শুধুমাত্র যাদের ছেলে সন্তান হচ্ছেনা তাদের ছেলে হওয়ার জন্য। হ্যাঁ ঠিক তাই এইসব মানুষদের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে শুষে নেওয়া হয়। কিন্তু ফলাফল তারা কিছুই পায়না। কিন্তু শেষে যখন তারা ব্যাপারটা উপলব্ধি করে, তখন অনেকটা দেরী হয়ে গেছে। খরচের টাকার পরিমাণ হয় অনেক বেশী।
এক্ষেত্রে দম্পতি যদি পয়সাওয়ালা হয় তবে তাদের আঘাত সহজে হজম হলেও..মধ্যবিত্ত ঘরের লোকেদের হিসাবের অঙ্কটা গ্যাসের ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এদিকে যখন মা চাপ দেয় - বাবা, নাতি হলে দশটা আঙুল ভরে আংটি দেবো..এই ঘন্টাধ্বনি তে ঘরের চারিদিকে খুশির জোয়ারে চারিদিকে থইথই।
অন্যদিকে যে মা..মাসের পর মাস নিজের গর্ভে একটা প্রাণকে পরম স্নেহে বড়ো করতে থাকে..সেই মায়ের যখন ভ্রণ পরীক্ষা করে ছেলে না মেয়ে সেই বিষয়ের পরীক্ষা করে বাচ্চাটি নষ্ট করার পরিকল্পনা সাজানো হয়..
তখন একটা মায়ের বুকে যে কি পরিমাণ কষ্ট হয় সেটা কি কেউ বোঝে?
তবে আমি আজ যেই গল্পটা বলবো সেটি অভিন্ন। আগেই বলে দিচ্ছি আমাদের গল্পের দুনিয়ায় আসতে গেলে.. আপনাকে হিংসা,রাজনীতি, ব্যস্ততা,অদয়ালু মনোভাবকে সুটকেস ভরে রেখে আসতে হবে। কারণ এই জগৎ পশুপাখি ঘিরে। এই জগৎ অবলা পশুদের অত্যাচার বন্ধের বিরুদ্ধে, এই জগৎ অবলাদের প্রতি অত্যাচার বন্ধ করে তাদের একটা ভালোবাসার দুনিয়ার চাঁদরে মুড়িয়ে দেওয়ার একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস। তবে সেটি সম্ভব নয় যদি আপনারা আমাদের সাহায্যে করেন। একা একা রাজা হওয়া যায়না, আমাদের সকলের উদ্দেশ্য যেন এই অবলাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৩১/০৩/২০২০। দিনটি আরটা পাঁচটা দিনের মতোন এক নয়। ওইদিন বার্ণপুরের আশেপাশে কোনো একটা জায়গায় জন্ম হয়েছিলো ফুটফুটে একটি বিড়াল সোনার। যে বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলো বিড়ালটি তারাই পরে ওর নাম রাখে কালু।
আমাদের কালু খুব বদমায়েশি করলেও। কালুসোনার মা,বাবা ও দিদিকে ছাড়া পাঁচ মিনিটও চলেনা। বাবা যখন অফিস থেকে ফিরে আসে তখন যেই সময়ে বাবা বাড়ি আসে সেই সময়ে কালুসোনা জানলায় গিয়ে বসে থাকে। বাবার সাথেই রাতে বিছানায় ঘুমায়।
খাবারের মধ্যে আমাদের কালুসোনার আমুল দুধের গুঁড়ো,ভাত, মাছ আর বেসনের পোকড়া তার খুব প্রিয়। যেটার গন্ধ যদি একবারও কালুর নাকে গেছে তো..কালু তার মা'কে পাঁচ মিনিটও দাঁড়াতে দেয়না।
ওর কোনো অভিযোগ থাকলে..সেটা ধরে নেওয়া খুব সোজা। কারণ ওইদিন বাবু রাতের বেলায় তার বাবার কাছে শুতে আসেনা। রাগ করে বসে থাকে। বাবার আদরের অপেক্ষা করে জানলায় বসে। হয়তো ভাবে কখন বাবা আদর করে তুলে নিয়ে যাবে তাকে। কালুর একটা দিদিও আছে যার নাম চিনি। সেই একমাত্র কালুর সঙ্গী। এরা দুইজনে যদি একবার এক হয়ে যায়..তো পুরো বাড়ি মাথায় তুলে রাখে।
ছবি - কালুর বাবা ও তার মায়ের সাথে তোলা ছবি
কালু সোনা সচরাচর রাগেনা, তবে রেগে গেলে তাকে আমুল দুধের গুঁড়ো দিতে হয় গো বাপু। এ ছাড়া সে আর কিছু বোঝে না গো। হ্যাঁ তবে বাবা যদি আদর করে তাহলেও বাবুর রাগ গলে জল হতে বেশী সময় লাগেনা। বাবাকে খুব ভালোবাসে।
ঘুম থেকে উঠে কালু সোনার দুধ খাওয়ার অপেক্ষায় থাকে, তাইতো সে ডাইনিং চেয়ারের উপর বসে থাকে, যতক্ষণ না বাবুকে দুধ দেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ সে ওখানেই বসে থাকবে।
কালু ও তার মায়ের সাথে তোলা ছবি
আমাদের কালু সোনার একটি বিশেষ গুণ হলো..সে কিন্তু ঘর নোংরা করতে একদম পছন্দ করেনা। ছোটোবেলা থেকেই কালুসোনা বাথরুমে গিয়েই প্রাকৃতিক ডাকযোগে সাড়া দিত সে।
এছাড়া তার মায়ের মন খারাপ থাকলে মায়ের কাছে গিয়ে মা'কে আদর করে..যেন ওহ বলতে চাইছে মা তুমি চিন্তা করোনা, আমরা সবাই আছি তো। বাবা যদি কালু সোনাকে কিছু বলে তবে কালুসোনা সেটাও বোঝার চেষ্টা করে।
এই হচ্ছে তোমাদের প্রিয় কালুসোনা..তোমরা সকলে আশীর্বাদ করো কিন্তু আমাদের সোনাকে..যাতে কালুসোনার দীর্ঘ হয়।
পুরো ঘটনাটি Poulami Acharjee নামের এক দিদিভাই আমাদের জানিয়েছেন। তার খুব আদরের ভাই কালু। একসময় সে মন খারাপ ও করেছে কারণ তার কোনো ভাই নেই..তবে এখন আর তার মন খারাপ হয়না। পৌলুমির মা, পৌলুমি কে বলেছে..তোর ভাই নেই তো কি হয়েছে? এরাই তোর ভাই..যারা তোকে কোনোদিনও কষ্ট দেবেনা।
গল্পটা কেমন লাগলো আপনাদের সেটা জানিনা। তবে তার মায়ের মতোন মা যেন সব জায়গায় বিরাজ করে। সত্যি এই গল্পটা যারা ছেলে চাই, ছেলে পছন্দ করেন তাদের কিছুটা হলেও শিক্ষার বিষয় হওয়া উচিৎ। তার মা দেখিয়ে দিয়েছেন ছেলে মেয়ের ভেদাভেদ বলে কিছু হয়না।
যেখানে আমরা যেখানে ছেলে ছেলে করে লড়াই করি, যেখানে এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী মানুষ সেইসব মানুষদের দুর্বলতাকে ঘিরে ব্যাবসা শুরু করেছে সেখানে এই ঘটনার মূল্যে কতখানি সেটাই প্রশ্নের।
সর্বশেষে ছেলে মেয়ের মধ্যে ভেদাভেদ করবেন না। একটা মেয়ের জন্ম হয় বাবার ঘরে, সে বেশি দিন বাবার ঘরে থাকার ভাগ্যে নিয়ে আসেনা..কারণ তার মৃত্যু লেখা থাকে স্বামীর ঘরে। একটা মেয়ে হওয়া যে কতটা কষ্টের সেটার মর্ম সকলে বোঝেনা। তাই একটা অনুরোধ রইলো..পরেরবার থেকে ছেলে চাই, ছেলে চাই না করে যদি কন্যা সন্তান হয়..তো তাকে না ফেলে বরণ করে নিন। আর পারলে যে টাকা ছেলে হওয়ার পেছনে খরচ করতেন সেই টাকা মেয়ের ভবিষ্যৎ ও পড়াশোনার উপর খরচ করুন দেখবেন ঠকবেন না।
আলোচ্যে ঘটনাটি অনেক মেয়ের কাছেই ভরসা হয়ে দাঁড়াবে যাদের কিনা ভাই নেই, অথচ বাড়িতে ছোটোছোটো বিড়াল কুকুরের মতোন বন্ধুরা রয়েছে।
আমাদের উদ্দেশ্যে সকলের মধ্যে ভালোবাসা পৌঁছে দেওয়া যাতে মানুষ গুলো পশুগুলোর উপর একটু হলেও কম অত্যাচার করে।