Kolkata Midnight Talk

প্রতিদিন আমাদের সাথে অসংখ্য ঘটনা ঘটে। সেই সকল ঘটনা যেগুলো আমরা কেউ শেয়ার করার মতোন কাউকে পাইনা, আমাদের ব্লগে সেই সকল অজানা গল্প, অবলা পোষ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখা ছাড়াও কিছু লেখকের ভূত ও ভালোবাসার গল্প পাবেন। আশা রাখছি আমাদের পাশে আপনাদের মতোন বন্ধুদেরকে সবসময় পাবো।

LightBlog

Breaking

শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২০

নভেম্বর ২৮, ২০২০

সবুজ রঙের হ্যারিকেন ও কালু। মলয় বিশ্বাস।

ছবি - নিজস্ব। 

সবুজ রঙের হ্যারিকেন ও কালু
~ মলয়।

ঘটনাটি অনেক আগের
তখন রাত প্রায় দেড়টা। স্টেশন থেকে একা একা বাড়ি ফিরছি। বিধাননগর দক্ষিণদাড়ির কাছেই একটা ভোজবাড়িতে কাজ করতাম। (ভোজবাড়ি = Banquet) তো শেষট্রেন ধরেই ফিরতাম। এমনি সময় তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাই। তবে আজ আমাদের মালিক চারদিনের পয়সা পেমেন্ট করবে। পেমেন্ট পাওয়ার পর সকলের সাথে ওখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতে অনেকটাই দেরি  হয়ে গেলো। যাদের সাথে কথা বলছিলাম ওদের বাড়ি স্টেশনের ধারেই তবে আমার বাড়ি আরও অনেক দুরে। স্কুলে পড়ার সময় ছেলেগুলোর সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিলো এখনও বন্ধুত্ব বজায় আছে। কলেজের ফিস্  এর খরচাপাতি এই কাজের থেকেই উঠে আসতো। তো পয়সা পেয়ে সকলকে বিদায় জানিয়ে ফিরতে ফিরতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। সামনেই একটা বাঁশবন, তারপর একটা ঝিল। ঝিল পেরিয়ে কিছুটা এগোলে ডানহাতের গলিটায় একটু এগোলে আমাদের বাড়ি। তো আমি এই রাস্তা দিয়ে সবসময়ই যাওয়া আসা করি। নিজেদের পাড়ার রাস্তা। তো নিজের মনে নানা রাজ্যের যতো উলফাল জিনিস আছে ভাবতে ভাবতে বাঁশ বাগানটা পার করেছি সামনেই একটা ঝিল..তারপাশ দিয়ে রাস্তা। আর রাস্তার পাশে একটা ছোটোমতোন ক্ষেত। একটা দুটো ঘরের পরেই ক্ষেত-টা শুরু হয়। তো ঝিলপাড়ের রাস্তাটা যেই ধরতে যাবো এমন সময় একটা কুকুর পেছনে একটা ডাক দিলো। এই ডাকটা আমার খুব চেনা। পেছনে ঘুরে দেখি কালু। তো এখানে বলে রাখি আমি যখনি বাড়ি ফিরি বিধানগর স্টেশন থেকে এক প্যাকেট বিস্কুট কিনে রাখি। রাস্তায় কোনো কুকুর চিৎকার করলে তার দিকে বিস্কুট এগিয়ে দিই৷ অবশ্য প্রথমে একটু ওরা চিল্লাচিল্লি করতো কিন্তু এখন আর করেনা। কারণ ওরা আমাকে চিনে গেছে।

তো কালুকে দেখামাত্রই বিস্কুটের প্যাকেট থেকে তিনটে বিস্কুট ওর সামনে এগিয়ে দিলাম। আর আমি নিজে একটা খেলাম। তো কালুকে বললাম..কি রে তুই ঘুমাস নি এখনো? যা গিয়ে ঘুমো।

জানিনা ওহ আমার কথা বোঝে কিনা। তবে ওহ বিস্কুট খাওয়ার উপর ঝিলের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন ছটফট করতে লাগলো। 

আমি কালুকে আজ অবধি এইরকম ভাবে আচরণ করতে দেখিনি। 

ভাবলাম কালুর হয়তো গায়ে কোথায় ব্যথা ফ্যথা আছে। দিনরাত এপাড়া ওপাড়া বারো যায়গায় যায়। মারপিট করে বেড়ায়। ব্যথা হবেনা। তো আমি বাড়ির দিকে যেই পা বাড়াবো ওমনি কালু আমার সামনে এসে মাটির উপরেই শুয়ে পড়লো। তারপর নিজে থেকেই ওঠে সামনের দিকের  ঘরেটার দিকে এক ছুট দিলো। আবার আমার সামনে এসে বসে পড়লো আবার উঠে ওই দোকান ঘরের দিকে ছুট দিলো।
আমি ভাবলাম কালু আমার সাথে খেলতে চায়। আমি কালুকে একটু বকে বললাম..এখন খেলবোনা। এখন ঘুমাবো। কাল সকালে বাড়িতে আসিস। এইবলে আমি যেই পা বাড়াবো। ওমনি আমার কালো প্যান্ট-টা কালু টেনে ধরলো।

তারপর কালু আবারো ওই সামনের ঘরের দিকে ছুট লাগালো, আর আমার সামনে দৌঁড়ে এলো। আমার সামনে দাঁড়িয়ে মুখটা ওই ঘরটির দিকে করলো আবারো ছুট দিয়ে ওই ঘরের সামনে গিয়ে একটা মৃদু স্বরে ঘেউ করে উঠলো।

আমি ভাবলাম হয়তো ওইঘরে কেউ আটকা পড়ে আছে। এই ঘরটা কিছুদিন হলো হয়েছে। দরজা ফরজা নেই। সম্ভবত এই ঝিলপাড়ের সামনের রাস্তাটা বেশ চলতি হওয়ায় এই ঘরটা একটা দোকান ঘর হবে। আমি ভাবলাম ওই ঘরে হয়তো কিছু একটা হয়েছে। তাই কালুর পেছন পেছন ওই ঘরের দিকে এগোলাম। যতোটুকু চাঁদের আলোয় দেখলাম ঘর্র ভেতরটা ফাঁকা পুরো। তো কালুকে দেখলাম ঘরের পাশে গিয়ে চুপ করে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওই ঘরের পাশে গিয়ে দেখি পরপর চারটে কুকুর চুপ করে মাটিতে মুখ নীচু করে শুয়ে আছে। কালুও মাটিতে মুখ লাগিয়ে নীচু হয়ে শুয়ে পড়লো।

আমি ব্যাপারটা কি হচ্ছে বুঝলাম না। হঠাৎ দেখলাম কালু সহ আর চারটে কুকুর এক দৃষ্টিতে ওই ঝিলপাড়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওদেরকে অনুসরণ করে ঝিলের দিকে তাকালাম। তাকিয়ে যা দেখলাম তা লিখে প্রকাশ করতে পারবোনা।
দেখলাম অনেক দুর থেকে একটা আলো ঝিলপাড়ের দিকে এগিয়ে আসছে। ব্যাপারটা ভালো মতোন বুঝতে পারছিলাম না। তবে আলোটা ধীরেধীরে যখন বড়ো হতে লাগলো তখন বুঝলাম একজন বয়স্ক মহিলা লাঠি হাতে করে এই ঝিলপাড়ের দিকে এগিয়ে আসছে।

আমার বয়স কুঁড়ি বছর। এই ঝিলের থেকে কিছুটা এগোলেই আমার বাড়ি। আমি আজ অবধি চোখে তো দেখা অনেক দুরে কথা কারুর কাছ থেকে শুনিনি এই ঝিলের উপর থেকে কেউ গভীর রাতে হেঁটে হেঁটে এই ডাঙার দিকে এগিয়ে আসে।

দেখলাম ওই বয়স্ক মহিলাটি ডাঙায় উঠে বামদিকে মুখ করে ( বাঁশ বাগানের উল্টোদিকের পথ, যেথ ধরে কিছুটা এগোলেই দুটো গলি পড়ে..ওই গলির ডানদিকেরটা ধরে কিছুটা দুর গেলে আমার বাড়ি ) 
উনি ওই দু'মাথা ওয়ালা গলির দিকে এগোতে শুরু করলো। যেতে যেতেই একসময় সে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।
ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে এলো প্রায়। একজন বয়স্ক মহিলা, কোমড় পরে গেছে। নীচু হয়ে হাটে উনি। কিন্তু ওনার চলার গতি ভীষণ দ্রুত। নিমেষে উনি ঝিলপাড়ের রাস্তা পাড় করে এগিয়ে চললো।

ভয়ে ও কৌতুহলে আমি একদিকে হতভম্ব ঠিকই। একেই শীতের রাত, তার উপর  এইরকম একটা জিনিসের দেখা। আশেপাশে কেউ নেই। এইরকম পরিস্থিতিতে সেইসময় আমার যে কি অবস্থা হয়েছিলো সেটি কেবল আমি জানি। একসময় ভাবলাম, এখন তো ওই মহিলাটি নেই দ্রুত ছুটে বাড়ি চলে যাই।

যেই ভাবা, সেই কাজ..আমি আমার ব্যাগটা উঠিয়ে পিঠে নিলাম দৌঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি..সেইসময় কালুর হঠাৎ কি হলো জানিনা..কালু আবার আমার পায়ের সামনে এসে শুয়ে পড়ে মুখটা আমার দিকে করে..মায়াবী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চাহনি দেখে এটুকু বুঝলাম যে..ওহ আমাকে যেতে দিতে চায়না। আর আমি সাংঘাতিক রকমের ভয় পেয়ে গেলেও, জানিনা কি মনে করে আমি এক অদ্ভুত কৌতুহলের বশে ওখানেই বসে পড়লাম। আর পুরো ব্যাপারটা কি থেকে কি হলো মেলাতে লাগলাম। ঠিক এমন সময় বাকি চারটে কুকুর আমার পাশ থেকে উঠে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। মানে সামনে থেকে দেখতে গেলে..ওই দোকান ঘরের গা সেটে দাঁড়ানো আর কি। কালুও আমার পায়ের সামনে থেকে উঠে ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো..সকলেই ওই ঝিলপাড়ের রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে আছে।
( চলবে ) 

গল্পটি সময় খরচ করে এতোদূর অবধি পড়েছেন তার জন্য আপনাদেরকে মন থেকে ধন্যবাদ জানাই। এই গল্পটির প্রথম পর্ব এখানেই শেষ করলাম। দ্বিতীয় পর্ব আপনাদের উৎসাহ পেলে খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশ করবো।

#মলয়_বিশ্বাসের_ভৌতিক_গল্পসমগ্র #ভূত
#ভূতের_গল্প।
#সবুজ_রঙের_হ্যারিকেন_ও_কালু_প্রথম_পর্ব

সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২০

নভেম্বর ২৩, ২০২০

কালো কুকুরের কেলেঙ্কারি। মলয়।

ছবি ও লেখা - নিজস্ব।   
কালো কুকুরের কেলেঙ্কারি। 
   ~ মলয়। 

- দাদু পাশের বাড়িতে ওই ননি দিদিকে দেখলে? কোথা থেকে একটা কুকুর নিয়ে এসেছে।
  - হ্যা রে দেখলাম।
- দাদু ওদের পরিবারের কেউ তো কোনোদিন রাস্তার কুকুরদের একটা দানাও খেতে দেয়নি। এমনকি ওরা বাসি,পচা পান্তা ভাতও দিব্বি খেয়ে নেয়। তো ওরা যে কুকুর আনলো খেতে দেবে কি??

  - আরে চুপ..কর..
দেখছিস হাতে ফোন নিয়ে আছে। ওদের নাম নিয়ে কিছু বলিস না।

- কেন দাদু।
তোমার বন্ধুর ছেলে তো পুলিশ। তুমি আবার ওদের ভয় পাচ্ছ কেন?

  - ভয় কি আর সাধে পাচ্ছি..
ওই দেখ ননির হাতের মোবাইল-টা। দিনরাত ওই মোবাইল নিয়ে কুকুরের ছবি তোলে। কেউ যদি কুকুর নিয়ে কিছু বলতে আসে তবে ওইযে ভিডিও ক্যামেরা করেনা মোবাইল দিয়ে..সেইসব করে কাকে যেন দেখায়..কিছুক্ষণের মধ্যে বেশ শক্তপোক্ত লোকেরা এসে ধমক-ফমক দিয়ে যে বা যিনি কুকুরের নামে কিছু বলে..তাদের অবস্থা খারাপ করে দেয়।

 - বলো কি?
দাদু।

  - আমি কি আর সাধে..চুপচাপ বসে থাকি। তুইও চুপচাপ থাক সব খেল দেখতে থাক।

** দুই মাস পর কোনো এক রৌদ্রময় দিনে **

  ননি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে..হঠাৎ তার বান্ধবীর সাথে দেখা।

 - কেমন আছিস রে ননি? তোর সে গলুমলু কুকুরটা কই? কুকুর-টা কেমন আছে রে?

ননি - আরে আর বলিস না..ওকে আমি রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছি। ওহ খালি ডাকতো..কথা শুনতো না। ওকে কোনো বিশেষ প্রশিক্ষণ দিলেও আগ্রহ সহকারে মনে রাখেনা।

 - ওহহহ ফেসবুকে তো দেখতাম ঘন্টায় ঘন্টায় লাইভে আসতিস। আর বলতিস এই আমার বাচ্চা খাচ্ছে, এই আমার বাচ্চা পটি করছে, এই আমার বাচ্চা ঘুমোচ্ছে..এই আমার বাচ্চা খেলছে..আর প্রত্যেকবার ক্যাপশনে লিখতিস..দেশী পুষুন, দেশী হয়েও বিদেশী পোষে যেইজন সেইজন কে দেখিতে পারেনা ননির এই সাধাসিধে মন। আমিতো তোর কুকুরের প্রতি ভালোবাসা দেখে পাগল হয়ে যেতাম..ভাবতাম আমার যদি একটা কুকুর থাকতো।

ননি - হ্যাঁ সেইসব এখন অতীত। ৭-৮ দিন আগে ওকে ছেড়ে দিয়ে এসেছি। 

  - কিন্তু তোর মতোন একজন এতো বড়ো কুকুরপ্রেমী এই কাজটা করেছে শুনলে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় হয়ে যাবে।

ননি - আরে ননি, এতো কাঁচা কাজ করেনা। আমি যখন বুঝলাম আমার দ্বারা আর কুকুর পোষা হবেনা, তখন ফেসবুকে একটা পোস্ট করলাম..আমার বাড়িতে রোজ ১০০ টা কুকুর আসে, আমি ওদের রোজ খাবার দিই..এই কুকুরটা প্রায় দুইমাস আগে রাস্তা দিয়ে উদ্ধার করি, একটি বিশেষ কারণে ওকে রাখতে পারছিনা। কোনো সহৃদয় ব্যক্তি যদি ওকে দত্তক নিতেন তাহলে এই শিশুটি একটা ঘর পেতো। আর এই গরীব মেয়েটির মুখে হাসি ফুটতো। 
ব্যস।। আর নীচে লিখেছিলাম adopt deshi..

এতো বড়ো একটা লেখা লিখে পোস্ট করলাম কেউতো ওকে দত্তক নিলোনা উল্টে লাইক,কমেন্টও করলো না।

  - এ ভারী অন্যায়। 
একটাও লাইক,কমেন্ট করলোনা। এটা আর নিতে পারলামনা। তুইতো এর আগে যখনি ওর ছবি পোস্ট করতিস তখনি লাইক,কমেন্ট,শেয়ার ঝুড়ি ভরে ভরে পেতিস। আর এই পোস্টে তোর এতো খারাপ অবস্থা। যাক গিয়ে..তো কুকুরটাকে কোথায় ছাড়লি??

আমি ছাড়িনি, আমার বাবা ছেড়ে দিয়ে এসেছে। জানিস কত সাধ করে ওকে এনেছিলাম..পুরো কুচকুচে কালো। আমাদের বাড়িতে যে তান্ত্রিকটা আসতো..সে একবার গল্প করতে করতে বলেছিলো..কালো কুকুরকে শনিবার,মঙ্গলবার দুপুরে খাওয়ার আগে যদি একটা করে রুটি খাওয়ানো যায়..তাহলে নাকি সংসারে উন্নতি হবে। 

  - আচ্ছা তাই নাকি?
আমিতো শুনেছিলাম কাককে খাওয়ালে গ্রহরাজ খুশী হয়। কারণ কাক নাকি কেতুর বাহন। রোজ ভোরবেলায় খালি পায়ে..ধোঁয়া জামা কাপড় পড়ে..কাক কে বোঁদে খাওয়ালে নাকি সংসারের সব দুঃখ মিটে যায়। 

ননি - কি বলিস?
দ্বারা এই ব্যাপারটা ওই তান্ত্রিককে জিজ্ঞেস করবো।

ওকেতো আমরা রাস্তায় পেয়েছিলাম বেশ গবলু দেখতে ছিলো। আর তাছাড়া ওহ খুব তাড়াতাড়ি বড়ো হয়ে যাচ্ছিলো..ওর বয়স কত আমি সেটাও জানিনা..রাস্তায় যেতে যেতে পেছন করছিলো..আর তান্ত্রিকের কথাটা মনে পড়ে গেছিলো তাই ওকে নিয়ে এসেছিলাম বাড়িতে। আমার অনুমান ওর বয়স ৭-৮ মাসের বেশী হবে।
কিরকম গবলু হয়ে গেছিলো তুই না দেখলে বিশ্বাস করবিনা..ওর এতো জোর যে ওকে আমরা কেউই ধরে রাখতে পারতাম না।

  - হ্যাঁ করিস তো।
তোর থেকে একটা হেব্বী জিনিস জানলাম..প্রয়োগ করে দেখতে হবে। তবে কালো কুকুর যে কই পাই।

ননি - হ্যাঁ তবে কুচকুচে কালো। একটুও সাদা থাকলে চলবেনা।

  - ওরে বাবা..কুচকুচে কালো..ইয়ে মানে ওর দাঁত যদি সাদা হয়..তাহলে কি চলবেনা??

ননি - আরে দাঁত তো সবারই সাদা। না দাঁত সাদা হলে অসুবিধা নেই।

  - এইজন্যেই তো তোকে আমার এতো ভালো লাগে..তুই আমার ডার্লিং আমার সুইটহার্ট। কিন্তু তোর কুকুরটার জন্য আমার ভীষণ মন খারাপ করছে।

ননি - হ্যাঁ রে..আমারও মন খারাপ হয়ে গেলোরে ওর কথা বলতে বলতে। দাঁড়া একটু ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস আপডেট দিই..

#গল্প_হলেও_সত্যিই

" আজ প্রায় অনেকদিন হয়ে গেলো, আমারক প্রিয় লালু আর নেই। আমার আজও মনে পড়ে সেই রাতের কথা..ওইদিন কালুর আগেই আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম..কালু প্রতিদিন আমার আগে বিছানায় গিয়ে শুতো তারপর আমি বিছানায় গিয়ে শুতাম। কিন্তু সেইদিন আমি আগেই শুয়ে পড়েছিলাম বলে..আমার কালু রাগ করে আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে..সত্যিই  ওরা কথা বলতে না পারলেও..রাগ,অভিমানের দিক থেকে যেকোনো মানুষকে টেক্কা দিতে পারবে।
আমার কালু..
আই ফিরে আই।

স্ট্যাটাস-টা পোস্ট করার পর।

একটা মনের চাপা দুঃখকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে লিখলাম।

  - কিন্তু তুই স্ট্যাটাসে লিখেছিস যে, ওহ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে..কিন্তু ওকেতো তোরা গিয়ে ছেড়ে দিয়ে এসেছিস। যদি এই ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যায় যে..তুই মিথ্যা স্ট্যাটাস লিখেছিস তখন??

ননি - আরে তুই স্ট্যাটাস-টা ভালো করে পড়িস নি?
ক্যাপশনে কি লেখা আছে??

" গল্প হলেও সত্যিই "
পরে কিছু ঝামেলা হলে বলতে পারবো যে এটা একটা গল্প ছিলো..যেটার সাথে বাস্তবের মিল থাকতে পারে..আবার নাও পারে।
আর এখানে তো একবারো আমার নাম উল্লেখ নেই..তবে কালুর নাম উল্লেখ আছে..আর এই দুনিয়ায় কি শুধু আমার কুকুরের নামই কালু ছিলো?

  - বাহ..ননি তোর গোয়েন্দা বুদ্ধি আর তোর স্ট্যাটাস আর অবলাদের প্রতি ভালোবাসা দেখে আমিতো একেবারে মুগ্ধ। তোর জবাব নেইরে।

ননি - হ্যাঁ রে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রে জানিস ওর ছবি পোস্ট করলেই কত লাইক পেতাম..সেইসব পুরনো দিনগুলো কি করে যে ভুলি। চলি রে..খুব কষ্ট হচ্ছে মনে।

  - হ্যাঁ রে তুই সাবধানে যা।
আমারো মন খারাপ হয়ে গেলোরে।

ননি বাড়ির দিকে এগোতে লাগলো। 



পর্ব - দুই

ননি বাড়ির কিছুটা আগে ননিকে দেখতে পেয়ে সেইযে দাদু আর নাতি..আবারো কথোপকথন শুরু করে দিলো।

বুঝলি..এইবার একটা নাটক দেখার জন্য প্রস্তুত থাক।

  - কেন দাদু?
কি হয়েছে??

দাদু - চুপ করে দেখনা শুধু।

ধীরেধীরে ননি বাড়ির সামনে এসে বাইরের কদরজাটা খুললো। বাড়ির দরজা খুলে ননিতো সাংঘাতিক অবাক হয়ে গেলো..কারণ যে কালুকে তার বাবা ছেড়ে দিয়ে এসেছিলো। সেই কালু তার বাড়ির উঠোনে খেলছে। সবথেকে অবাক করার বিষয় কালুর চেহারাটা একদম ভাঙেনি। একদম মোটাসোটা হয়ে গেছে।

ননি চিৎকার দিয়ে তার মা'কে ডাকলো..মা..ও মা..
ননির মা বাইরে এসে সেও অবাক।

কুকুরটা বাড়ি এলো কিভাবে??

ওরা দুইজনে যতোটা অবাক..তার থেকে বেশী অবাক ননির বাবা..তিনজনে যতোই অবাক হোক না কেন..আমাদের কালু বাবু তখন উঠোনে এদিক-ওদিক দিব্বি ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছে।

তো ওইদিন কালু ননিদের বাড়িতেই ছিলো..ওরা সকলে মিলে ঠিক করলো কুকুরটাকে আবার ছেড়ে দিয়ে আসা হবে। তবে আগে যেখানে ছেড়ে দিয়ে আসা হয়েছিলো সেখানে নয়..তার থেকেও অনেক দুরে।

তো প্ল্যান মাফিক কাজ পরেরদিন অনেক ভোর ভোর কুকুরটাকে ছেড়ে দিয়ে আসে ননির বাবা।

বাড়ির লোক তখন বেজায় স্বস্তিতে। ঠিক বিকেল বেলায় ননির মা যখন বাড়ির বাইরে বেড়োয় মাঠে যাওয়ার জন্য তখন দেখে..কালু বাড়ির বাইরে উঠোনে..ননির মা'কে দেখামাত্র জিভ বের করে..ননির মায়ের দিকে ছুটে আসে।
ননির মা রেগে গিয়ে ননিকে ডাকে।

আর ননির কান ধরে বলে..
কুকুরকে কি ট্রেনিং দিয়েছিস?
বাড়ি ছেড়ে নড়ছেই না।

ননির বাবা তখন কাজ শেরে বাড়ি ফিরছে..গেটের বাইরে সাইকেল দাঁড় করিয়ে গেটটা সবে খুলতে যাবে।

ননির মা চিৎকার করে বলে উঠলো..দাঁড়াও বাড়ি ঢুকবেনা..

কুকুরটাকে কি তুমি বারবার পাড়ার মধ্যেই ছেড়ে আসো? 
যতোবার ছেড়ে আসো ততোবার চলে আসছে।

ননির বাবা কুকুরটার দিকে তাকিয়ে বললো - না..তো এইবার তো আমি অনেক দুরেই ছেড়ে এসেছিলাম..ওহ এতো তাড়াতাড়ি চলে এলো কি করে?

ননির মা - তোমার মুরোদ আমার জানা আছে। এই ব্যাগে কুকুরটাকে ভরো..এবার আমি যাবো তোমার সাথে..এমন জায়গাই ছাড়বো আর জীবনেও আসতে পারবেনা।

কথামতোন কাজ ননির মা ননির বাবার সাইকেলের পেছনে বসলো..ননির মা সাইকেলের পেছনে বসলো..
ননির বাবা সাইকেল চালানো শুরু করলো..একেই তো সারাদিন কিছুই খাইনি..ওপর দিকে এই হাতির মতোন একটা বউ আর সাথে একটা কুকুরকে নিয়ে যাচ্ছে..টেনেটুনে কোনো রকমে ৬-৭ কিলোমিটার পথ এগিয়ে একটা ফাঁকা জঙ্গলের কাছে সাইকেল দাঁড় করালো। কুকুরটিকে ছেড়ে দিয়ে..ননির বাবা ঢিল ছুঁড়ে কুকুরটাকে তাড়িয়ে..দুইজনে তাড়াতাড়ি সাইকেলে উঠে বসলো..কিন্তু কুকুরটা ওদের পেছন পেছন ছুটতে শুরু করলো..
ওরা আবারো কুকুরটাকে তাড়িয়ে দিলো..কিন্তু কুকুরটা আবারো ওদের পেছনে ছুটতে লাগলো..

শেষে বিরক্ত হয়ে..ননির মা..একটা মোটা বাঁশ নিয়ে কুকুরটার গায়ে বেশ সজোরে আঘাত করলো..

কুকুরটা কাঁদতে কাঁদতে পেছন দিকে দৌঁড় দিলো..

ননির মা ও বাবা দুইজনেই এবার স্বস্তির শ্বাস নিলো।
ওরা দুইজন ধীরেধীরে। সাইকেল নিয়ে এগোতে লাগলো..সামনে একটা মেইন রাস্তা। ওই রাস্তা পেরিয়ে কিছু দুর এগোলে ননিদের বাড়ি।।

ননির মা..ননির বাবাকে ভালোমতোন শাসাতে শাসাতে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলো..তাই রাস্তা পেরনোর সময় দুইজনেই একটু অন্যমনস্ক ছিলো। কারণ ননির মা তখন ননির বাবাকে শাসাতে ব্যস্ত ছিলো..আর ননির বাবা তখন ননির মায়ের বকবক থেকে বাঁচার জন্য উপায় খুঁজছিলো। তাই ওদের খেয়াল নেইযে ওরা মেইন রাস্তায় এসে পড়েছে..হঠাৎ একটা সজোরে ধাক্কাতে তারা দুইজনেই পড়ে গেলো..

পেছন ঘুরে ননির বাবা ও ননির মা দেখলো..তাদের প্রিয় কুকুরটা রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে আছে..একটা ছোটোহাতি কিছুদুর এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর সোজা দ্রুত গতিতে বেড়িয়ে গেলো..সব দেখে দুইয়ে দুইয়ে চার করতে বেশীক্ষণ লাগলোনা ওদের। 

ওরা অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলো তখন তাদের বাম পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে একটা ছোটোহাতি আসছিলো..কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে আর কুকুরটির প্রভুর প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসার জোরে কুকুরটি পেছন থেকে দৌঁড়ে এসে সজোরে ধাক্কা দিয়ে তাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে দেয়..এবং কুকুরটি ননির মা ও ননির বাবার পরিবর্তে সে নিজেই মৃত্যুকে আপন করে নেয়।

ননির মা ও বাবা দুইজনে দৌঁড়ে গিয়ে কুকুরটাকে ধরে রাস্তার এপাশে নিয়ে আসে..ততোক্ষণে রাস্তায় লোকজন জড়ো হয়ে গেছে..এক প্রফেসর দিদি সেখানে ছিলো তার নাম বর্ষা মিত্র তিনি একজন দক্ষ এনিমেল কমিউনিকেটর।টেলিপ্যাথির মাধ্যমে সে প্রাণীদের মনের কথা বুঝতে পারে। সে নিজের ব্যাগ থেকে জলের বোতল বের করে কুকুরটির মাথায় পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে মাথাটা উঁচু করে জল খাওয়াতে থাকে।

জল খেতে খেতে কুকুরটি কেমন হাসফাস করতে থাকে..দিদিও কেমন যেন মরিয়া হয়ে যেতে থাকে।
দিদি এমন এমন ভাবে কুকুরটির সাথে পশুসুলভ আচরণ করছিলো তা দেখে বোঝা যেতে পারে সে কুকুরটির সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। কিংবা কুকুরটির ভাষা বোঝার চেষ্টা করছে।।
একসময়ে সব নিস্তব্ধ। 
কুকুরটির ছটফট করতে থাকা চনমনে দেহটি মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।


সকলের চোখে তখন জল । 
ধীরেধীরে আশেপাশের লোকজন ফাঁকা হয়ে গেলো..বর্ষা দিদিও উঠে দাঁড়ালো নিজের মনকে শক্ত করে। 

যাওয়ার আগে ননির বাবা - ও ননির মা বর্ষা দিদিকে জিজ্ঞেস করলো - দিদি
কুকুরটি মরে যাওয়ার আগে ওইরকম করছিলো কেন ?

বর্ষা দিদি - কুকুরটি চলে যাওয়ার আগে ওর হাবভাব, আচরণ দেখে যা বুঝলাম ওহ বলে গেলো..আমার বাড়িরলোক যেন ভালো থাকে। দিদি নিজের চোখের জল মুছে এগিয়ে যেতে লাগলো। 

ননির বাবা ও ননির মা তখন রাস্তায় বসেছিলো কালুর নিথর দেহটার উপর একটা মাছি ভনভন করতে করতে কালুকে কেন্দ্র করে ঘুরতে লাগলো।

ননির মা ও ননির বাবার দুইজনের চোখেই তখন জল।


আলোচ্যে গল্পটি শুধুই কি একটা গল্প? দয়া করে কেউ সখের বসে কুকুর বিড়াল পুষতে যাবেননা। কারণ আপনি হয়তো নিজের সখ নিবারণ করার জন্য ওদের বাড়িতে আনছেন, কিন্তু ওরা আপনাকে নিজের দুনিয়া বানিয়ে নেবে।

লেখা উপস্থাপনায় - Silient talks of midnight animals.. 

গল্পটার সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই।

বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২০

নভেম্বর ১৯, ২০২০

হাটেবাজারে দুপুররাতে। মলয় বিশ্বাসের লেখা ভৌতিক গল্প।

ছবি ও লেখা - মলয় বিশ্বাস

শীতের এক রাতে। একজন ইঞ্জিন ভ্যান চালক তার গাড়িটা হাটবাজারের একেবারে প্রবেশপথের সামনের একটা কোণে দাঁড় করিয়ে চাদর গায়ে দিয়ে..একটা দোকানঘরের সামনে তিনি ও তার হেল্পার শুয়ে আছে। ভোর তিনটে থেকে এক এক করে লরি আসতে থাকবে হাটে..তখন থেকেই তার ডিউটি শুরু আর কি। ভ্যানে কাঁচামাল বোঝাই করে তিনি ও তার হেল্পার সেখান থেকে অনেক দুরে মানে তাদের লোকালয়ের সবথেকে জনবহুল এরিয়ার এক বাজারে নিয়ে আসবে। ওখানেই তিনি এবং তার বউ সবজী বিক্রি করে।
এটাই তাদের রোজকার রুজিরোজগারের একমাত্র মাধ্যম। আর এই ভ্যানটা তাদের রোজকার নিত্যসঙ্গী। 
তো যেইদিনকার কথা বলছি..তিনি ও তার হেল্পার তখন শুয়ে আছে। হঠাৎ একটা মাঝবয়সী ভদ্রলোক এসে একটা চিৎকার করে তাদের ডেকে উঠলো..

বড়োভাই..
বড়োভাই..
চিৎকার শুনে ইঞ্জিন ভ্যান চালক ও হেল্পার দুইজনেই উঠে বসলো..
তো ওই লোকটাকে দেখে ইঞ্জিন ভ্যান চালক বললো কি হয়েছে? এতোরাতে আপনি এইভাবে ডাকছেন কেন? 

তখন ওই মাঝবয়েসী ভদ্রলোকটি বলে উঠলো..
বড়োভাই..তাড়াতাড়ি চলুন। আমার ছেলের খুব শরীর খারাপ..ওকে হাসপাতালে না নিয়ে যেতে পারলে ওহ হয়তো বাঁচবেনা। তাড়াতাড়ি চলুন বড়োভাই। বেশী দূর নয় সামনের এক দোকানে ওকে বসিয়ে রেখে এসেছি।
ইঞ্জিন ভ্যান চালক নিজের টাইপ সেট বের করে দেখলো ঘড়িতে তখন রাত ১.০০ টা। ওই সময় দেখার জন্য আর কয়েকজনের সাথে কথাবলার জন্য লোকটি ফোনটা কিনেছিলো..আসলে কিনেছিলো বললে ভুল হবে..তার বউ জোড় করে কিনতে বাধ্য করেছিলো। তাদের কাছ থেকে সবজী কিনতো এক তান্ত্রিক এই ফোনটা বিক্রি করেছে তাদের কাছে। তান্ত্রিকটা প্রচুর মদ খেতো। সংসারের চাপে, পারিবারিক ধমকে সে মদ খাওয়ার পথ থেকে সরে আসতে চাইছিলো..বলাবাহুল্য সে এই প্রচেষ্টা আগেও অনেক বার করেছে তবে তার প্রচেষ্টা বিফল হয়েছে।

এইবার তার পরিবার এমন চাপে রেখেছিলো যে তিনি বাধ্য হয়ে মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন..কিন্তু তিনি মদ ছাড়লেও মদ যে তাকে ছাড়েনি। প্রায় একমাস তিনি মদ খায়নি। স্মৃতির গোড়ায় জল দিলে দেখা যায়যে..লোকটা যেপরিমাণ অর্থ উপার্জন করতো সেই টাকা তার বউ নিজের হাতে নিয়ে নিত। তার স্বামীর হাতে দিতোনা। যাতে তার স্বামী বিফলে না চলে যায়। দেশীমদের দোকানে গিয়ে তান্ত্রিকের বউ শাসিয়ে এসেছিলো যাতে তার স্বামীকে এই দোকানের আসেপাশে দেখলেই যেন পিটিয়ে ভাগিয়ে দেয়।

তো লোকটা একটা মাস অনেক যন্ত্রনায় কাটিয়েছে..মদ ছাড়ার পর থেকে তার রাত হলেই কোমড়ে ব্যথা, হাঁটুতে ব্যথা। অথচ যেকটাদিন মদ খেত সেইকটা দিন তার শরীরে কোনো ব্যথ্যাই ছিলোনা।

তো ওই তান্ত্রিকটি মাত্র ১০০ টাকাতে এই ফোনটি দিয়ে দেয় ওই সবজী বিক্রেতার কাছে। কমদামে ফোন পেয়ে তারা বেজায় খুশী। তবে তান্ত্রিকটি একটা নির্দেশ দিয়েছিলো তাদেরকে..যে..
এই ফোনে একটা নম্বরে ফোন আসে ২২২ এই তিনটে নম্বরে। এই নম্বরে ফোন এলে যেন তিনি সেই ফোনটি না ধরে। কারণ এই নম্বরে যখনি ফোন আসে তখনি কোনো না কোনো অঘটন ঘটে। এইবলে তান্ত্রিকটি পয়সা নিয়ে ফোনটি তাদের দিয়ে বাজার থেকে চলে যায়। তবে ওই যে নম্বর থেকে ফোন আসতো সেই নম্বরে আসা ফোন ধরলে যে কি পরিণতি হতে পারে সেইবিষয়ে ওই তান্ত্রিকের জানা নেই। কারণ তিনি নিজেও ওই নম্বর থেকে আসা  ফোন কোনোদিনও ধরেননি।

মোবাইলে সময় দেখাটা ওই লোকটির পাড়ার এক মাস্টারমশাই শিখিয়েছিলেন..
কাজেই তিনি সময়টা বুঝতে পারতেন। ওই ইঞ্জিনভ্যান চালক বললো - চলুন..তবে আমাকে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেবেন..ভোর বেলায় গাড়ি ঢুকবে। মাল নিতে হবে। আর ভাড়া ১৫০/- টাকা নেবো।

ওই মাঝবয়েসী ভদ্রলোকটি বললো ঠিক আছে ভাই আগে তো চলুন আমার ছেলেকে বাঁচান বড়োভাই।

তো ওই ইঞ্জিন ভ্যান চালক মাংকি টুপি পড়ে, চাদর-টা গায়ে জড়িয়ে..ভ্যানের ইঞ্জিনটা চালু করে যেই ভ্যানটা চালানো শুরু করবে ওমনি তার ফোন বেজে উঠলো..
লোকটি ফোন ধরে বললো  - হ্যালো কে?

ওপাশ থেকে কেউ কোনো কথা বলছেনা। তিনচারবার হ্যালো হ্যালো করে..শেষে বিরক্ত হয়ে তিনি যখন ফোনটা কেটে দেয়। তবে কেটে দেওয়ার আগে তিনি একটা অদ্ভুত জিনিস আবিস্কার করে যে..মাত্র তিনটে নম্বরে ফোন এসেছিলো। এর আগে কখনো এই নম্বরে ফোন আসেনি। লোকটির তখন তান্ত্রিকের কথা মাথায় নেই। এদিকে গ্রামের মানুষদের মনে এতো প্যাঁচ থাকেনা। এখান থেকে হসপিটাল অনেক দুরে। আর যাতায়াত ব্যবস্থা সেমন ভালো নয়। ভ্যানচালক কম করেই ভাড়া বলেছে। তিনি যেহেতু খেটে খায় তাই আরেকজন খেটে খাওয়া মানুষের দুঃখ-টা ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারে।
লোকটি ভ্যান চালাতে চালাতে ভাবছে..ইশ আজ যদি গাড়ি আগে ঢুকে যায় তাহলে তিনি মাল নিতে পারবেন না আর। কারণ এ ওহ সব দরদাম করে  যে যা পারবে কিনে নিয়ে চলে যাবে। আর লোকটির বাঁধাধরা দুই জায়গা আছে..তিনি বারোমাস ওই দুই জায়গা থেকেই তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেয়। 

লোকটি মনে মনে ভাবছে ইশ, আজ যদি..সময়ের একটু হলেও উনিশ বিশ হয় তবে তার আর কেনা-বেচাটা ঠিকঠাক হবেনা। তার বাজেট ছিলো ১২০০ টাকা৷ যদি সময় মতোন আসতে না পারে তাহলে তার হাত থেকে অনেক গুলো টাকা খসতে পারে। কারণ তিনি যেই জায়গা দুটো থেকে কাঁচামাল কেনেন সেই জায়গা দুটো হাঁটের একেবারে সামনেই.. মানে হাঁটে ঢুকতেই আগে ওই জায়গা গুলো পড়ে আরকি। তাই জিনিসপত্র বিক্রি হয়ে যায় তাড়াতাড়ি। সকাল ১০.০০টার পর থেকে হাঁট ভেঙে যায় তখন থেকে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বাড়ে।

তো এই সেই চিন্তা করতে করতে ভ্যান চালাচ্ছে। তো হঠাৎ করে ওই লোকটা বললো বাবু ওইযে ওই দোকানের সামনে গাড়ি দ্বার করান। 

লোকটির কথামতোন ওই ইঞ্জিনভ্যান চালকটি তার ভ্যান দ্বার করায়। দেখে যে একটা ছেলে হেলান দেওয়ালে দিয়ে বসে আছে..তার গায়ে রয়েছে একটা নোংরা সোয়েটার। ইঞ্জিন ভ্যান চালক ও তার হেল্পার দুইজনে মিলে ছেলেটাকে ভ্যানে তুললো। তারপর হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হলো। যেতে যেতে আবারো ইঞ্জিন ভ্যান চালকটি ভাবনার রাজ্যে চলে গেলো..
সে ভাবতে লাগলো মানুষ এই ভালো এই খারাপ। গ্রামের মানুষরাই বেশী কষ্ট করে..শহরের মানুষেরা কতবেলা অবধি পড়েপড়ে ঘুমোয়। এই সাতপাঁচ ভাবছে হঠাৎ তারমনে হলো ভ্যানটা কেমন আগের থেকে ভারী-ভারী লাগছে। 
চারজন মানুষের যা ওজন হয় তার থেকেও বেশী ওজনের মনে হচ্ছে ভ্যানটি। আর সবথেকে বড়োকথা পেছন থেকে একটা মরা পচার তীব্র গন্ধ আসছিলো..যাকিনা সত্যিই অস্বস্তিকর। 

তো ওই চালক তখন একটা ছোটো ব্রীজের উপর দিয়ে যাচ্ছিলো নিচে একটা জলশয়। বেশী দুরত্ব নয়। মানে ব্রীজথেকে জলাশয়ের দুরত্ব চারহাত হবে। তো চালকের তখন কি মনে হলো সে পেছনে তাকালো..পেছনে তাকিয়ে দেখে যে..ছয়জন লোক ও সেই ছেলেটি আর তার বাবা তারা সকলে মিলে ওই হেল্পারটির দেহটিকে হিংস্র জন্তুর মতোন খাচ্ছে। চালক তখন মারাত্মক রকম একটা ঝটকা খেলেন..তিনি ভ্যানের ব্রেক কষতে চাইছিলেন কিন্তু ভ্যান আর দাঁড়ায়না। তাই তিনি কি করবে কি করবে ভেবে না পেয়ে ওই জলাশয়ে ঝাঁপ দেন।

উনি অজ্ঞান হবে হবে করছেন কিন্তু তখন ওনার এইরকম একটা অবস্থা যে ওনার অজ্ঞান হওয়ার মতোন সেই পরিস্থিতি তৈরী হয়নি। আর তার থেকে বড়ো কথা উনি বিশাল খাটতে পারে। উনি এতো সহজে ভেঙে পড়েন না। তবে এই বিষয়টিকে তিনি কিছুতেই মেলাতে পারছিলেন না। তিনি একে তো এই ঠান্ডার মধ্যে কল সাঁতরে সাঁতরে কোনো রকম ভাবে ডাঙায় উঠলেন..তিনি কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা ছুটতে লাগলেন। তার বুক বিশাল ধড়ফড় করছিলো..দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একসময় উনার চোখ দুটো বুজে এলো..তবে চোখ বন্ধ করবার আগে উনি বাজারের কথা চিন্তা করছিলেন। এমন সময় তার একটা ফোন আসে..ওই ফোনটা পকেট থেকে বের করার সাথে সাথে তিনি অজ্ঞান হয়ে যায়।

অজ্ঞান হওয়ারই কথা। তিনি আর নিতে পারছিলেন না। সকালে যখন তার ঘুম ভাঙে সে দেখে বাজারে একটা মাচার মধ্যে। এই মাচায় সন্ধ্যাবেলায় সকলে বসে আড্ডা দেয়। তো ওই ইঞ্জিন ভ্যান চালকটির যখন ঘুম থেকে উঠেই সে তার হেল্পারকে আগে দেখতে পেলো। এছাড়া তার বড় ছেলে, এক চায়ের দোকানের দাদা সবাই রয়েছে।

তো তিনি যখন আস্তে আস্তে উঠে বসলেন তখন তার ছেলে জিজ্ঞেস করে তার কি হয়েছিলো??

তিনি ধীরেধীরে নিশ্বাস নেয়। আর সব বলতে থাকে।

সবশুনে তার হেল্পার তো পুরোই অবাক। আর হেল্পারের কথা শুনে ওই ইঞ্জিন ভ্যান চালকটি আরও অবাক হয়ে যায়।

ওই হেল্পার যা বললো।

তিনি আর ওই ইঞ্জিন ভ্যান চালকটি পাশেই শুয়ে ছিলেন।  হঠাৎ রাত ১.০০ টার দিকে তার মালিক স্বপ্নের মধ্যে কি উল্টোপাল্টা বলতে থাকে..তো একসময় সে ঘুমের মধ্যেই বকবক করতে করতে উঠেবসে তারপর সে পাগলের মতোন হাত দুটো সামনে নিয়ে দৌঁড়াতে থাকে। মানে দুর থেকে দেখলে মনে হবে যে, ছোটো বাচ্চারা যেভাবে বাইক চালায়..মানে হাত দুটো উঁচু করে। সেইভাবে তিনিও হাত দুটো উঁচু করে এক দৌঁড় দিতে লাগলেন। তো এই দেখে তার হেল্পার ও চেঁচামেচি করতে করতে তার পেছনে দৌঁড় দেয়। শেষে তিনি একটা জলাশয়ের পাশে গিয়ে ওই ইঞ্জিন ভ্যান চালকটিকে উদ্ধার করেন।

সবশুনে ইঞ্জিন ভ্যান চালকটি খুব অবাক হয়ে যায়। মানে কি হচ্ছিলো, ভোর রাতে তার সাথে কি হয়ে গেলো..সেইসব ভাবলেই তার গায়ে কাটা দিয়ে ওঠছে।

তবে চমক এখনো বাকি ছিলো। ওই হেল্পার আর ইঞ্জিন ভ্যান চালকের বড়ো ছেলে ওখন ভ্যান চালকটিকে ধরে ধরে ভ্যানের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলো চালকটির চোখ গেলো এক জায়গায় প্রচুর লোক জড়ো হয়ে আছে সেইদিকে।

জায়গা হলো সেই জায়গা যেখানে তারা গতরাতে শুয়েছিলো। ওই ইঞ্জিন ভ্যান চালক বললো - ওখানে এতো ভীড় কেন? কি হয়েছে??

হেল্পার টি তখন বললো - বাবু..কাল রাতে তো আপনি ওইভাবে বকবক করতে দৌঁড় দিলেন..আপনার পেছন পেছন আমিও দৌঁড় দিলাম। যখন আপনাকে পেলাম তখন..অনেক খুঁজে দুইজনকে খুঁজে পেয়ে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আপনাকে ধরে ধরে যখন বাজারের মাচাতে নিয়ে এলাম তখন এসে দেখি যেখানে আমরা শুয়েছিলাম সেইজায়গা তো রাস্তার ধারেই..তো ওখানে একটা লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই দোকানঘরে গিয়ে ধাক্কা মারে।
ভাগ্যিস আপনি দৌঁড় দিয়েছিলেন আর আপনার পেছন পেছন আমিও দৌঁড় দিয়েছিলাম নাহলে দুইজনের যে কি হতো বলা যেত না।

অঙ্কিতা দিদি ও দিদির ছানাপোনা

বন্ধুরা সবাই কেমন আছো? অনেকদিন পর আবারো একটা গল্প নিয়ে চলে এলাম।  যেই গল্পের মুখ্য চরিত্র কাজল, আলু আর মায়াকে নিয়ে। অঙ্কিতা দিই হচ্ছে এই বাচ...