ছবি - নিজস্ব।
সবুজ রঙের হ্যারিকেন ও কালু
~ মলয়।
ঘটনাটি অনেক আগের
তখন রাত প্রায় দেড়টা। স্টেশন থেকে একা একা বাড়ি ফিরছি। বিধাননগর দক্ষিণদাড়ির কাছেই একটা ভোজবাড়িতে কাজ করতাম। (ভোজবাড়ি = Banquet) তো শেষট্রেন ধরেই ফিরতাম। এমনি সময় তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাই। তবে আজ আমাদের মালিক চারদিনের পয়সা পেমেন্ট করবে। পেমেন্ট পাওয়ার পর সকলের সাথে ওখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতে অনেকটাই দেরি হয়ে গেলো। যাদের সাথে কথা বলছিলাম ওদের বাড়ি স্টেশনের ধারেই তবে আমার বাড়ি আরও অনেক দুরে। স্কুলে পড়ার সময় ছেলেগুলোর সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিলো এখনও বন্ধুত্ব বজায় আছে। কলেজের ফিস্ এর খরচাপাতি এই কাজের থেকেই উঠে আসতো। তো পয়সা পেয়ে সকলকে বিদায় জানিয়ে ফিরতে ফিরতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। সামনেই একটা বাঁশবন, তারপর একটা ঝিল। ঝিল পেরিয়ে কিছুটা এগোলে ডানহাতের গলিটায় একটু এগোলে আমাদের বাড়ি। তো আমি এই রাস্তা দিয়ে সবসময়ই যাওয়া আসা করি। নিজেদের পাড়ার রাস্তা। তো নিজের মনে নানা রাজ্যের যতো উলফাল জিনিস আছে ভাবতে ভাবতে বাঁশ বাগানটা পার করেছি সামনেই একটা ঝিল..তারপাশ দিয়ে রাস্তা। আর রাস্তার পাশে একটা ছোটোমতোন ক্ষেত। একটা দুটো ঘরের পরেই ক্ষেত-টা শুরু হয়। তো ঝিলপাড়ের রাস্তাটা যেই ধরতে যাবো এমন সময় একটা কুকুর পেছনে একটা ডাক দিলো। এই ডাকটা আমার খুব চেনা। পেছনে ঘুরে দেখি কালু। তো এখানে বলে রাখি আমি যখনি বাড়ি ফিরি বিধানগর স্টেশন থেকে এক প্যাকেট বিস্কুট কিনে রাখি। রাস্তায় কোনো কুকুর চিৎকার করলে তার দিকে বিস্কুট এগিয়ে দিই৷ অবশ্য প্রথমে একটু ওরা চিল্লাচিল্লি করতো কিন্তু এখন আর করেনা। কারণ ওরা আমাকে চিনে গেছে।
তো কালুকে দেখামাত্রই বিস্কুটের প্যাকেট থেকে তিনটে বিস্কুট ওর সামনে এগিয়ে দিলাম। আর আমি নিজে একটা খেলাম। তো কালুকে বললাম..কি রে তুই ঘুমাস নি এখনো? যা গিয়ে ঘুমো।
জানিনা ওহ আমার কথা বোঝে কিনা। তবে ওহ বিস্কুট খাওয়ার উপর ঝিলের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন ছটফট করতে লাগলো।
আমি কালুকে আজ অবধি এইরকম ভাবে আচরণ করতে দেখিনি।
ভাবলাম কালুর হয়তো গায়ে কোথায় ব্যথা ফ্যথা আছে। দিনরাত এপাড়া ওপাড়া বারো যায়গায় যায়। মারপিট করে বেড়ায়। ব্যথা হবেনা। তো আমি বাড়ির দিকে যেই পা বাড়াবো ওমনি কালু আমার সামনে এসে মাটির উপরেই শুয়ে পড়লো। তারপর নিজে থেকেই ওঠে সামনের দিকের ঘরেটার দিকে এক ছুট দিলো। আবার আমার সামনে এসে বসে পড়লো আবার উঠে ওই দোকান ঘরের দিকে ছুট দিলো।
আমি ভাবলাম কালু আমার সাথে খেলতে চায়। আমি কালুকে একটু বকে বললাম..এখন খেলবোনা। এখন ঘুমাবো। কাল সকালে বাড়িতে আসিস। এইবলে আমি যেই পা বাড়াবো। ওমনি আমার কালো প্যান্ট-টা কালু টেনে ধরলো।
তারপর কালু আবারো ওই সামনের ঘরের দিকে ছুট লাগালো, আর আমার সামনে দৌঁড়ে এলো। আমার সামনে দাঁড়িয়ে মুখটা ওই ঘরটির দিকে করলো আবারো ছুট দিয়ে ওই ঘরের সামনে গিয়ে একটা মৃদু স্বরে ঘেউ করে উঠলো।
আমি ভাবলাম হয়তো ওইঘরে কেউ আটকা পড়ে আছে। এই ঘরটা কিছুদিন হলো হয়েছে। দরজা ফরজা নেই। সম্ভবত এই ঝিলপাড়ের সামনের রাস্তাটা বেশ চলতি হওয়ায় এই ঘরটা একটা দোকান ঘর হবে। আমি ভাবলাম ওই ঘরে হয়তো কিছু একটা হয়েছে। তাই কালুর পেছন পেছন ওই ঘরের দিকে এগোলাম। যতোটুকু চাঁদের আলোয় দেখলাম ঘর্র ভেতরটা ফাঁকা পুরো। তো কালুকে দেখলাম ঘরের পাশে গিয়ে চুপ করে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওই ঘরের পাশে গিয়ে দেখি পরপর চারটে কুকুর চুপ করে মাটিতে মুখ নীচু করে শুয়ে আছে। কালুও মাটিতে মুখ লাগিয়ে নীচু হয়ে শুয়ে পড়লো।
আমি ব্যাপারটা কি হচ্ছে বুঝলাম না। হঠাৎ দেখলাম কালু সহ আর চারটে কুকুর এক দৃষ্টিতে ওই ঝিলপাড়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওদেরকে অনুসরণ করে ঝিলের দিকে তাকালাম। তাকিয়ে যা দেখলাম তা লিখে প্রকাশ করতে পারবোনা।
দেখলাম অনেক দুর থেকে একটা আলো ঝিলপাড়ের দিকে এগিয়ে আসছে। ব্যাপারটা ভালো মতোন বুঝতে পারছিলাম না। তবে আলোটা ধীরেধীরে যখন বড়ো হতে লাগলো তখন বুঝলাম একজন বয়স্ক মহিলা লাঠি হাতে করে এই ঝিলপাড়ের দিকে এগিয়ে আসছে।
আমার বয়স কুঁড়ি বছর। এই ঝিলের থেকে কিছুটা এগোলেই আমার বাড়ি। আমি আজ অবধি চোখে তো দেখা অনেক দুরে কথা কারুর কাছ থেকে শুনিনি এই ঝিলের উপর থেকে কেউ গভীর রাতে হেঁটে হেঁটে এই ডাঙার দিকে এগিয়ে আসে।
দেখলাম ওই বয়স্ক মহিলাটি ডাঙায় উঠে বামদিকে মুখ করে ( বাঁশ বাগানের উল্টোদিকের পথ, যেথ ধরে কিছুটা এগোলেই দুটো গলি পড়ে..ওই গলির ডানদিকেরটা ধরে কিছুটা দুর গেলে আমার বাড়ি )
উনি ওই দু'মাথা ওয়ালা গলির দিকে এগোতে শুরু করলো। যেতে যেতেই একসময় সে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।
ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে এলো প্রায়। একজন বয়স্ক মহিলা, কোমড় পরে গেছে। নীচু হয়ে হাটে উনি। কিন্তু ওনার চলার গতি ভীষণ দ্রুত। নিমেষে উনি ঝিলপাড়ের রাস্তা পাড় করে এগিয়ে চললো।
ভয়ে ও কৌতুহলে আমি একদিকে হতভম্ব ঠিকই। একেই শীতের রাত, তার উপর এইরকম একটা জিনিসের দেখা। আশেপাশে কেউ নেই। এইরকম পরিস্থিতিতে সেইসময় আমার যে কি অবস্থা হয়েছিলো সেটি কেবল আমি জানি। একসময় ভাবলাম, এখন তো ওই মহিলাটি নেই দ্রুত ছুটে বাড়ি চলে যাই।
যেই ভাবা, সেই কাজ..আমি আমার ব্যাগটা উঠিয়ে পিঠে নিলাম দৌঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি..সেইসময় কালুর হঠাৎ কি হলো জানিনা..কালু আবার আমার পায়ের সামনে এসে শুয়ে পড়ে মুখটা আমার দিকে করে..মায়াবী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চাহনি দেখে এটুকু বুঝলাম যে..ওহ আমাকে যেতে দিতে চায়না। আর আমি সাংঘাতিক রকমের ভয় পেয়ে গেলেও, জানিনা কি মনে করে আমি এক অদ্ভুত কৌতুহলের বশে ওখানেই বসে পড়লাম। আর পুরো ব্যাপারটা কি থেকে কি হলো মেলাতে লাগলাম। ঠিক এমন সময় বাকি চারটে কুকুর আমার পাশ থেকে উঠে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। মানে সামনে থেকে দেখতে গেলে..ওই দোকান ঘরের গা সেটে দাঁড়ানো আর কি। কালুও আমার পায়ের সামনে থেকে উঠে ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো..সকলেই ওই ঝিলপাড়ের রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে আছে।
( চলবে )
গল্পটি সময় খরচ করে এতোদূর অবধি পড়েছেন তার জন্য আপনাদেরকে মন থেকে ধন্যবাদ জানাই। এই গল্পটির প্রথম পর্ব এখানেই শেষ করলাম। দ্বিতীয় পর্ব আপনাদের উৎসাহ পেলে খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশ করবো।
#মলয়_বিশ্বাসের_ভৌতিক_গল্পসমগ্র #ভূত
#ভূতের_গল্প।
#সবুজ_রঙের_হ্যারিকেন_ও_কালু_প্রথম_পর্ব