#kuttawaala
বিধাননগরের একটা জায়গায় কাজ করতাম..কাজ শেরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে কখনো রাত হয়ে যেত..আর নাহলে ভোর..
যেহেতু ট্রেনে আসতাম..রাতের শেষ ট্রেন-টা মিস করে দিলে..আবার ভোরের প্রথম ট্রেন ধরতে হতো..
শীতকাল হোক কিংবা গরম কাল..রাত ১২.০০ থেকে ৩.০০ অবধি রাস্তা যে কতটা নির্জন সেটা কেবল যারা রাতের বেলায় কাজ শেরে বাড়ি ফেরে তারাই জানে..
অতো রাতে শেই অদূরে বড়ো বড়ো লরি অহ কয়েকটা ছোটো ছোটো যানবাহনের চলাচলের আওয়াজ রাতের নিস্তব্ধতাকে কিছুক্ষণের জন্য আলোকিত করে আবার পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে শান্ত করে তোলে..ঝিঁঝিঁপোকার ডাক ক্রমশ রাতের স্তব্ধতাকে একটা সূরের তালে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে..
অতো রাতে রাস্তায় দু-চারজন রাতের বেলায় কাজ করতে যাওয়া কয়েকজনকে ছাড়া আর কাউকে চোখে পড়েনা..যদি বিপদে পড়েন..তাহলে আপনাকে নিজের সমস্যা নিজেকেই সমাধান করতে হবে।
চোর ছিনতাইকারীর তো আর অভাব নেই।
রাস্তা দিয়ে যখন অতো রাতে হেঁটে ফিরতাম..তখন বারবার পিছন ফিরে দেখতে ইচ্ছে করতো..পেছনে কেউ আসছেনা তো??
কিন্তু মন বলতো তাকাস না পেছনে..ছোটোবেলায় গল্পে শুনিস নি..রাতবিরেতে প্রেতাত্মারা ঘোরাফেরা করে..কিছু কিছু এমন নির্জন জায়গা যেমন বাঁশবাগান,নদীর দুইধার,আম বাগান এইরকম রাস্তাগুলো দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় অতো গভীর রাতে একটু হলেও বুকে ভয়ের ঢাক বাজিয়ে তুলবেই।
আর সেইসময় রাস্তার কুকুরেরা আপনাকে দেখে যদি চিল্লায় তবে বিশ্বাস করুন নিজেকে সবথেকে বেশী নিঃসঙ্গ মনে হয় তখন।
আমি যখন বাড়ি ফিরতাম তখন কয়েকটা নির্দিষ্ট জায়গা আমি চিনতাম যেইখানে কিছু কুকুর আমাকে দেখে চিল্লাতো..অথচ দিনের বেলায় ওই জায়গা গুলোর কুকুর গুলো আমাকে দেখে চিল্লাতো না।
প্রথম প্রথম একটু ভয় লাগতো..কিন্তু আস্তে আস্তে যখন রোজ ওই পথ দিয়ে যাওয়া শুরু করলাম তখন ওরা আমাকে দেখে আর চিল্লাতো না..আমি ট্রেনথেকে কিছু শুকনো খাওয়ার কিনে রাখতাম..ভাবতাম কোনো কুকুর যদি আমার দিকে তেড়ে আসে তাহলে ওদের খাওয়ার দিয়ে শান্ত করবো..
কিন্তু ওরা আর আমাকে দেখে চেঁচামেচি করতো না। তবে হ্যাঁ কুকুর গুলো তখন আমার পেছনে দূর থেকে কেউ আমারি মতোন নাইট শিফট কর্মীদের দেখলে চেঁচামেচি শুরু করে দিতো..
তখন নিজের মনে বল পেতাম। ভাবতাম আর যাই হোক ওরা আমাকে কোনো ক্ষতি করবেনা।
একবার ভাবুন তো যদি কুকুর নিধন হয়ে যেত..কিংবা স্থানীয় মানুষেরা যদি কুকুরদের অন্যত্র সরিয়ে দিতো তাহলে আমার মতোন যারা রাতে কাজ করে বাড়ি ফেরে তারা কতটুকু নিরাপদ থাকবে??
কি দেখে তারা ভরসা পাবে??
অনেকে হয়তো বলবেন যে..
ধুর, এতে তো সুবিধাই হয়েছে আর কেউ আপনাকে জ্বালাতন করবেনা..কিন্তু ওইযে..যদি ছিনতাইকারী কিংবা অন্য যেকোনো বিপদে পড়েন অতো রাতে..তখন কি করবেন??
হ্যাঁ সেই প্রভুভক্ত কুকুররাই বিনা সাতপাঁচ ভেবে আর কিছু করক আর নাই করুক অবস্থা সুবিধার মনে যদি না করে ঘেউঘেউ করেতো প্রতিবাদ করতেই পারে?
আর হ্যাঁ যদি অতো রাতে আপনি কুকুরের পাল্লায় পড়েন তবে আমি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলছি ভয় পাবেন-না,আর ওদের ভয় দেখাবেন না..আপনি একজন-কে ভয় দেখাবেন ওরা দশ কুকুর সঙ্গী ডেকে আপনার দিকে এগিয়ে আসবে।
আপনি শান্ত থাকবেন।
আর যসি সাথে কোনো শুকনো খাবার থাকে তাহলে ওদের দিকে সেই খাবার এগিয়ে দেবেন। কয়েকদিন ওই পথ দিয়ে যাওয়া-আসা করলে দেখবেন ওরা আর আপনাকে দেখে চেঁচামেচি করবেন।
একবার ভাবুন তো..যদি এই প্রভুভক্ত কুকুরদের সরিয়ে ফেলা হয়..তবে ছোটোখাটো ছিটকে চোর গুলোর উপদ্রব আরও বাড়বে। কারণ কুকুরের ডাকাডাকির ভয় বলে কিছু থাকবেনা।
আর শেষ কথা হলো এইযে
অনেকেই আছেন যারা কুকুরপ্রেমীদের প্রায় বলে থাকেন যে,
রাস্তার কুকুর কে এতো ভালোবাসিস?? ওদের নিজের বাড়িতে নিয়ে রাখতে পারিস তো ??
প্রায় এই কথাটা অনেক পশুপ্রেমীদের শুনতে হয়..
তো দায়িত্ব নানিলে বুঝি ভালোবাসা যায়না??
এমন অনেক পরিবারের কিছু মুষ্টিমেয় সদস্যে আছেন যারা কুকুর-বিড়াল ভালোবাসেন..তারা ওদের নিজেদের বাড়িতে নিয়ে পুষতে চাইলেও..বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের দিকে তাকিয়ে আর সেই পদক্ষেপ-টা নিয়ে উঠতে পারেননা..একটি পরিবারে থাকতে হলে..অন্যনা সদস্যদের মতামতের উপর গুরুত্ব দিতে হয়।
তবে বাড়ির প্রধান সদস্য যদি কুকুর বিড়াল ভালোবাসে তবে সেক্ষেত্রে একটা ব্যবস্থা নেওয়া যেতেই পারে..তখন ঘরে একটা কুকুর বা বিড়ালকে এনে রাখা যেতেই পারে।
জানিনা ওই অবলাগুলো কি দোষ করেছে যার শাস্তি হিসেবে ওদের এতো দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে..